• যতো লেখা

  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'সেরা দশ গল্প'। অসাধারণ দশটি গল্পের এক অনবদ্য উপস্থাপন। বইটি পড়তে ক্লিক করুনসেরা দশ গল্প
  • ছবি ফেলে আসা এবং চলমান সময়ের কথা বলে। ধরে রাখে সময়কে স্মৃদির ফ্রেমে। মাহাবুবুল হাসান নীরু অ্যালবামটি দেখতে ক্লিক করুনঅ্যালবাম
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'হৃদয়ছোঁয়া পঁয়ত্রিশ'। দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ আর মন-জমিনে দাগ কাটার মতো পঁয়ত্রিশটি ছড়া-কাব্য। বইটি পড়তে ক্লিক করুনকাছের মানুষ
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর খেলাধুলা বিষয়ক লেখা পড়ার জন্য ক্লিক করুনখেলা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর শিশুতোষ লেখাগুলো পড়তে ক্লিক করুনশিশুতোষ রচনা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর গল্প পড়তে ক্লিক করুনগল্প
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ছড়া পড়তে ক্লিক করুনE-BOOK
  • এক মাসের লেখা

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা

এই নগরী, দৈনিক ইত্তেফাক-ক্যামব্রিয়ান কলেজ, বিএসবি গোলটেবিল বৈঠক

গোলটেবিল বৈঠকের একটি মুহূর্ত

গোলটেবিল বৈঠকের একটি মুহূর্ত

২৬ মে, ২০০৮, সোমবার গুলশানের স্টেক হাউজে দৈনিক ইত্তেফাকের এই নগরী ও বিএসবি ফাউন্ডেশন এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক জুবাইদা গুলশান আরা, ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের অধ্যক্ষ ড. করুনাময় গোস্বামী, কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজীর অধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ কাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. একে মনোওয়ার উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ফেড-ক্যাবের সেক্রেটারী জেনারেল একেএম নাজমুল হক জামালী, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ড. রোকেয়া কবীর, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ফাস্ট এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়রা চিনু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার এবং সভাপতিত্ব করেন এই নগরীর বিভাগীয় সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান নীরু।

নিচে তাঁদের উপস্থাপিত বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

niru4[1]

মা হা বু বু ল  হা সা ন  নী রু

সভাপতি ॥ বিভাগীয় সম্পাদক, এই নগরী, দৈনিক ইত্তেফাক

স্টেক হাউসের এই চমৎকার মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যায় আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা। আমাদের আজকের গোলটেবিল বৈঠকের বিষয় হচ্ছে,‘জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা’। দৈনিক ইত্তেফাকের সাপ্তাহিক আয়োজন এই নগরী এ বিষয়টি নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের তাগিদ অনুভব করেছে মূলত জাতীয় শিক্ষার দুরবস্থা, শহরমুখী শিক্ষার বিরূপ প্রসার, শিক্ষায় গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ ও উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত শ্রেণী বৈষম্য-ইত্যাদি নানা অনিয়ম, অব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করে। রাজধানী শহর ঢাকার শিক্ষার পরিবেশ মোটেও সুখকর নয়, যা নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে একটা গোলটেবিল বৈঠক করেছি। এই ঢাকা মহানগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বলা যায় যার একটা বাড়ি আছে সে-ই উৎসাহিত হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, কেননা আজ এটা একটা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। নগরের অভিজাত এলাকাগুলো জুড়ে তো এখন বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধানমণ্ডি এলাকা রীতিমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপোতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় যে কতো ধাঁচের কতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, তা বোধকরি গুণে শেষ করা যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রদান করা হচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বিদেশে উচ্চশিক্ষারও বন্দোবস্ত করে থাকে। এক্ষেত্রে কতোটা নিয়ম মানা হচ্ছে? কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে? এজন্য একটি প্রকৃত ও সমৃদ্ধ শিক্ষানীতি কতোটা জরুরী? পাশাপাশি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষাটা কতোটা যৌক্তিক? এই উপলব্ধি থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিএসবি ফাউণ্ডেশনকে সাথে নিয়ে ‘এই নগরী’র যৌথ আয়োজন। আমার বিশ্বাস, আজকের গোলটেবিল বৈঠকের মধ্য দিয়ে এমন কিছু বক্তব্য, পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা উঠে আসবে, যা একটি সুন্দর সমৃদ্ধ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমি আজকের বৈঠকের সঞ্চালক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শ্রদ্ধাভাজন ইমদাদুল হক মিলনকে আলোচনা পর্ব শুরু করার জন্য অনুরোধ করছি।

milon[1]

ই ম দা দু ল  হ ক  মি ল ন

সঞ্চালক ॥ কথাসাহিত্যিক

শুভ সন্ধ্যা, প্রিয় সুধীমণ্ডলী। দৈনিক ইত্তেফাক এবং ক্যামব্রিয়ান কলেজ বিএসবি আয়োজিত আজকের এই গোলটেবিল বৈঠকে আমি আপনাদেরকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের আজকের বিষয় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা’। আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন, আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি যে, এই মানুষগুলো শিক্ষার সঙ্গে জড়িত এবং আমাদের দেশ যতটা এগিয়েছে বা আরও যতদূর এগিয়ে যাবে তার পেছনে আপনাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমি শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখার জন্য লায়ন এম.কে. বাশারকে অনুরোধ করছি।

bashar[1]

লা য় ন  এ ম. কে. বা শা র  পিএমজেএফ

চেয়ারম্যান, বিএসবি ফাইন্ডেশন ও ক্যামব্রিয়ান কলেজ

আমরা জানি, স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরও বাংলাদেশে জাতীয় কোন শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হয়নি এবং একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের ব্যাপারে আমাদের দেশের সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছিল, বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুধীজনদের মতামতগুলোকে একসাথে করে একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করতে চাই।

যা জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরির ক্ষেত্রে একটি গ্রাউণ্ড ওয়ার্ক হতে পারে।

আমরা জানি, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১০/১৫ হাজার শিক্ষার্থী স্ব-অর্থায়নে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করে থাকে প্রায় ২০০টি কনসাল্টিং ফার্মের মাধ্যমে। আর এসব ছাত্র-ছাত্রীদের বিদেশে যাওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মগুলো।

ইতোমধ্যে বিদেশে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সরকার প্রতিবছর ১২ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব পাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এই রাজস্বের পরিমাণ আরও বাড়বে। বিদেশে যারা পড়তে যায় তাদের নিকট থেকে যেসব খাতে যে হারে রেভিনিউ পেতে পারে সরকার তাহলো-

নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের জন্য ১০০০ টাকা। সার্টিফিকেট, মার্কশিট ভেরিফিকেশন এবং এ্যাটাসটেশনের জন্য ১০০০ টাকা। স্টুডেন্ট ব্যাংক ফাইল ওপেনের সময় ব্যয় করতে হয় ৩৫০০ টাকা। ভ্যাট ও ট্যাক্স নেয়া হয় ৫২৫ টাকা। রেমিটেশন ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা।

সরকার যদি একটা নীতিমালার আওতায় এসব স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মগুলোকে নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে প্রতিটি ফার্মের জন্য ১০ লাখ টাকা সিকিউরিটি মানি নির্ধারণ করে দিলে এ খাত থেকে ২০ কোটি টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে বিদেশে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। বিদেশে যেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না, এরা খণ্ডকালীন সময়ে চাকরি করে প্রতিবছর প্রায় একশত কোটি টাকা উপার্জন করে থাকে। এরাই আবার পড়া শেষে প্রতিমাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা বেতনে চাকরি করে বিদেশে। এই সামান্যতম পরিসংখ্যান থেকে যে চিত্রটি পরিষ্কার হয়ে দাঁড়ায় তা হচ্ছে, স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মগুলো জাতির উচ্চ শিক্ষার পথকে শুধু উন্মুক্ত করেই দিচ্ছে না দেশকে অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য চ্যালেঞ্জিং বিশাল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া এই পেশায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এতে বেকার সমস্যাও লাঘব হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশে প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশী ছাত্র রয়েছে। গড়ে যদি প্রতি ছাত্র ৫০ হাজার টাকা আয় করে তবে মাসে তারা উপার্জন করছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বছরে এর হিসাব এসে দাঁড়ায় ১২শ কোটি টাকা। এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যারা বিদেশে চাকরি করছে যাদের মাসিক উপার্জন কম করে হলেও ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এমন ছাত্র সংখ্যা হবে প্রায় লক্ষাধিক। তারাও উপার্জন করে থাকে প্রায় ২ শত কোটি টাকা। বছর শেষে আয় করে প্রায় ২৪শত কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের কোন ধরনের বিনিয়োগ ব্যতিরেকে প্রতিবছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা উপার্জন হচ্ছে এই খাত থেকে। সরকার এই খাত থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়ে থাকে তা যদি উচ্চশিক্ষার জন্য স্ট্যাডি লোন হিসেবে আবার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করা হয়, তাহলে একদিকে দেশ যেমন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে অন্যদিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরাও বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে।

গোলটেবিল বৈঠক নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের দু'পৃষ্ঠার বিশেষ ক্রোড়পত্র

গোলটেবিল বৈঠক নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের দু’পৃষ্ঠার বিশেষ ক্রোড়পত্র

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ ব্যাপারে পজেটিভ ভূমিকা নিলে পোশাক শিল্প খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে সরকারের শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের বিনিময়ে তার চেয়ে বেশি আসবে আমাদের এই শিক্ষা খাত থেকে।

বিদেশী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিষয়টি একটি আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা দরকার। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মগুলো সঠিক এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকগুলো যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য স্টাডি লোন প্রদান করে সে ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা থাকা দরকার। এডভান্স ডিপ্লোমা কোর্সে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স সুবিধাসমূহ বন্ধ রয়েছে। তা পুনরায় চালু হওয়া দরকার। সারা বিশ্বে আমাদের দূতাবাস রয়েছে। এসব দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথকে আরও সম্প্রসারিত করা যায়। এছাড়া বহির্বিশ্বে আমাদের দূতাবাসগুলো নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রকে আরও বাড়ানো যায়। এজন্য এসব দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো সক্রিয় করার ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথকে আইন করে বন্ধ করা যায় না। এতে কেবলমাত্র একশ্রেণীর লোক উপকৃত হবে। আর অন্যদিকে সবশ্রেণীর মানুষের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে বহু শিক্ষিত ব্যক্তি রয়েছেন যাদের পেছনে বহু বিদেশী ডিগ্রী রয়েছে। এরা হয় ধনী শ্রেণীর কিংবা সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের কোন আমলা, বুদ্ধিজীবী শ্রেণীভুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এমন নীতিমালা অনুসরণ করা দরকার, যেখানে উচ্চশিক্ষার পথ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

বিদেশ থেকে ডিপ্লোমা কিংবা উচ্চতর ডিপ্লোমা কোর্সগুলোতে অধিকমাত্রায় লেখাপড়ার সুযোগ থাকলে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। আর এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এমন কিছু করা উচিত নয়।

zasim[1]

প্র ফে স র  ড.  জ সি ম  উ দ্দী ন  আ হ মে দ

সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আমরা বর্তমানে এক নতুন সহস্রাব্দ অর্থাৎ মিলেনিয়ামের উষালগ্নে রয়েছি। এ সময়টায় চলছে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের প্রতিযোগিতা। যে দেশ বা জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে যত উন্নত, তারাই প্রতিযোগিতায় শীর্ষে রয়েছে। এই নতুন মিলেনিয়ামে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উচ্চ শিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য বর্তমানে ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪টি সরকারী মেডিকেল কলেজ (ডেন্টালসহ), ২৭টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ এবং ৭০টি আইন কলেজ এবং ৩১৫০টি সাধারণ কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিকসহ) রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৯৮৩ সালে যেখানে ৩৭,০৭৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল, ২০০৫ সালে তা বেড়ে ১০,৭৩,৭২৬ জনে পৌঁছে। তবে এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৭,৫৫,৫৮৮ জন এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২,৩১,৭৪১ জন ছাত্রছাত্রী। তাই অন্যান্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১,১৬,৩৯৭ জন। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একই সালের মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৮,৪৭৪ জন। ২০০৫ সালে দেশের সবগুলো শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২,৬৩,৪৫৮ জন ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়। এদের ভেতর প্রায় ৩০ হাজার বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাধারণ, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং প্রায় ২ হাজার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায় (২০০৩ সালের তথ্য অনুযায়ী)। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় (তথ্যসমূহ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ-২০০৬ থেকে নেয়া হয়েছে)। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ কয়েকশ’ গুণ বেশি বলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সন্তানদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রায় অসম্ভব। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে হয়। কলেজগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা ও ল্যাবরেটরী যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতার কারণে শিক্ষার মান তত উন্নত নয় বলে অনেকেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে কলেজে ভর্তি হতে চায় না। তারা দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হতে না পারলে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চেষ্টা করে। এদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী দেশ ভারতে যায়। ভর্তির বেশি সুযোগ, ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচ এবং ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কম কড়াকড়ি, এসব কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভারতে পড়াশোনা করতে যাচ্ছে। আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করার জন্য প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী যায়। এদের অধিকাংশই উচ্চ মধ্যবিত্ত বা ধনী পরিবারের সন্তান এবং তুলনামূলকভাবে অধিক মেধাসম্পন্ন। ঐসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি হতে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজী দক্ষতার জন্য কৃএঋী বা অঋীকও কর্ণ্র এ ভাল স্কোরসহ স্নাতক পর্যায়ের জন্য ওইক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য ঐৗঋ/ঐুইক এ ভাল স্কোর থাকতে হয়। তাই উন্নত বিশ্বে দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আণ্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনা করতে যায় তারা মেধাবী এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এ পর্যায়ে স্কলারশীপের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় ৪/৫ বছরের লেখাপড়ায় জনপ্রতি প্রায় ৫০ লক্ষের মত টাকা খরচ হয়। এদের বেশিরভাগই দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান ও পরিবেশের কারণে উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যায় ছাত্ররা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হলো এদের সিংহভাগই শিক্ষা সমাপান্তে দেশে ফিরে আসতে চায় না। আর সত্যিকথা বলতে গেলে এরা দেশে ফিরে আসলে ওদের মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর তেমন সুযোগ আমরা দেশে সৃষ্টি করতে পারছি না। অন্যদিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্যও প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে যাচ্ছে। এরা উন্নত দেশের গবেষণাগারগুলোতে গবেষণার সুযোগ পায়। এই পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য স্কলারশীপ, এসিট্যান্টশীপ ইত্যাদির বেশ সুযোগ রয়েছে। অতীতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে যারাই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতেন তাদের বেশিরভাগই শিক্ষা সমাপান্তে দেশে ফিরে আসতো। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা ভিন্ন। এখন বেশিরভাগ বিদেশেই থেকে যেতে চায়। এভাবে আমাদের দেশের মেধা পাচার হচ্ছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে শিক্ষক ও গবেষণাকর্মীরা তাত্ত্বিক ও প্রয়োজনীয় উভয় ধরনের গবেষণা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে পারছে না। তাই উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবধান ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে। এর ফলেও উন্নত দেশগুলোতে মেধা পাচারের প্রক্রিয়া বেগবান হচ্ছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা থাকা অপরিহার্য। যেসব ক্ষেত্রে দেশে পর্যাপ্ত শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আণ্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ে বিদেশে শিক্ষাকেও নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। তবে এজন্য দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য সব ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার ব্যবস্থা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনজট নিরসনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অঙ্গসংগঠনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক রাজনীতির কারণে যেন শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্থ না হয় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।

উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনে অবশ্যই উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেতে হবে তবে এক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাজীবন শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত হয় জাতীয় পর্যায়ে সে ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। তাহলে উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে আমাদের দেশের শিক্ষা ও গবেষণা মানে যে ব্যবধান হচ্ছে, তা ঘুচে যাবে। একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় শিক্ষানীতিতে অবশ্যই এ ব্যাপারে সঠিক দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে।

ইমদাদুল হক মিলন

আমরা প্রফেসর ড. জসিম উদ্দীন আহমেদের আলোচনা থেকে বেশ কিছু বিষয় জানতে পারলাম। আপনি মোটামুটি একটা পরিসংখ্যানও দিয়েছেন। তবে আমি আপনাদের সকলকে একটু অনুরোধ জানাবো আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি- এই নীতিটা কেমন হওয়া উচিত, তার চেহারা কেমন, এখন প্রচলিত যে নীতি রয়েছে তার পরিবর্তে আমরা আরও ভালো কি পেতে পারি, সেদিকটির ওপরে জোর দেবেন।

rokeya[1]

রো কে য়া  ক বী র

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ

আমরা পাকিস্তান আমল থেকেই দেখেছি যে, শিক্ষানীতি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে তখন যে শিক্ষানীতি ছিলো তার বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশ হওয়ার পরও। এক সরকার আসে এক ধরনের শিক্ষানীতি দেয়, আরেকজন তা পরিবর্তন করে আরেক ধরনের শিক্ষানীতি দিতে চেষ্টা করে। কতগুলো জিনিস হচ্ছে-পলিসি গাইড লাইন আছে, আর কতগুলো হলো প্র্যাকটিক্যাল সাজেশন। প্র্যাকটিক্যাল সাজেশনগুলো কিন্তু শিক্ষানীতিগুলোতে থাকে না। সঠিক শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাবিদেরা যে কাজগুলো করছেন সেক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য আমাদের আসেনি। এখানে শিক্ষানীতির ভিত্তিটা কি হবে? কন্সটিটিউশনে দেয়া আছে। সেটার ওপর ভিত্তি করে কিন্তু হতে হবে। আজকাল ইংলিশ মিডিয়াম বলেন, পাবলিক ইন্সটিটিউশনগুলো বলেন, প্রত্যেকটাতে একই অবস্থা। ইংলিশ মিডিয়ামগুলোতেও আমি দেখেছি মুখস্ত করে টিচাররা শেখাচ্ছে। এদেশে বেশিরভাগ টিচাররা বাসায় বইগুলো মুখস্ত করে ছাত্রছাত্রীদেরকে তা-ই শেখাচ্ছে। আমি অনেক অভিযোগ পেয়েছি যে, টিচাররা যেভাবে বলছে ছাত্ররা যদি একটু এদিক সেদিক করে উত্তর দেয় তবে তারা ছাত্রছাত্রীদেরকে নাম্বার কেটে দেয়। এই অবস্থা আমাদের। আজকে শহর এবং গ্রামের শিক্ষা পদ্ধতিতে পার্থক্যের কথা এসেছে। ঠিক আছে, কিছু পার্থক্য আছে। সেখানে কিন্তু টেকনিক্যাল জিনিস নেই। টেকনোলজির অভাব। কিন্তু আমরা যদি শিক্ষানীতিটা এরকম করি যে শহরে বা গ্রামে যেখানেই হোক যে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে তাদের যদি কতগুলো বেসিক জিনিস ঠিক করতে পারি মানে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়লে তারা কি দক্ষতা নিয়ে বের হবে, ইন্টারমিডিয়েটে তারা কোন ধরনের দক্ষতা নিয়ে বের হবে এটার একটা দিক-নির্দেশনা আমরা যদি ঠিক করি তারপরে আমরা ব্যাক ক্যালকুলেশন করে সাবজেক্টগুলো সাজাতে পারি। একই সাথে আমাদের লাইফ স্কিল্ড সম্পর্কে একটা ওরিয়েন্টেশন থাকা দরকার। মুখস্ত বিদ্যা না যে ‘সকালে ও রাতে দাঁত মাজতে হবে’ বা ‘পানি ফুঁটিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হবে’। কিন্তু কী কারণে দাঁত মাজতে হবে আর কেনই বা পানি ফুঁটিয়ে খেতে হবে সেটি কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে-এভাবে লজিক দিয়ে কথাগুলো বোঝাতে হবে। তাদেরকে আশপাশের উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে যে মিথ্যা কথা বললে কি ক্ষতি হতে পারে, দুর্নীতি করলে কি ক্ষতি হতে পারে-এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ধারণা দিতে হবে। ঢাকা শহরে বসবাস করবে, কিভাবে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করবে, চলাফেরা করার ক্ষেত্রে ট্রাফিক রুলস রেগুলেশন কি হবে- সেসব বিষয়ে সম্যক ধারণা তাদেরকে দিতে হবে। গ্রামে যে ছেলেটি পড়ছে শহরের ছেলেটির মতো সেও জিওগ্রাফী সম্পর্কে জানবে, সংবিধান সম্পর্ক জানবে, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে সম্যাক ধারণা রাখবে, সয়েল সায়েন্স সম্পর্কে জানবে, ফিজিওলজি হেলথ এণ্ড হাইজিন সম্পর্কে বেসিক ধারণা রাখবে। সুতরাং, এগুলো সম্পর্কে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সকল ছাত্রছাত্রীকে অবশ্যই ধারণা দিতে হবে। তাদের থেকেই শিক্ষাবঞ্চিত শ্রেণীর মাঝে এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক ধারণা জন্মানো সম্ভব হবে। আর একটি বিষয় হচ্ছে, একজন ছাত্রের মধ্যে সেই ব্যাপারটি ঢোকাতে হবে, যাতে সে যে বিষয়েই কথা বলুক না কেন, তার কথায় যেন বাস্তবিক অর্থে যুক্তি থাকে এবং সেও যেন বোঝে যে আমার কথা যুক্তিসঙ্গত কি’না, সে ভাবনাটি তার মধ্যে জাগ্রত করে দিতে হবে। তবেই একটা কাঙিক্ষত ফল আমরা পাবো।

ইমদাদুল হক মিলন

আপা, আপনি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত একটা বেসিক নলেজের কথা বললেন যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এটলিস্ট ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত একটা লেবেল করে দেয়া উচিত কিন্তু এক্ষেত্রে কি আপনার মনে হয় তার আগে শিক্ষকদেরকে তৈরি করবার কোন ব্যাপার আছে? এ বিষয়টির অবতারণা আমি এ জন্যেই করলাম যে, বিভিন্ন কারণে আমাকে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়াতে হয়। স্কুল কলেজগুলোর সাথে আমার একটা যোগাযোগ রয়েছে। আমি লক্ষ্য করছি যে, দুঃখজনকভাবে ঐ লেবেলের শিক্ষকদের মধ্যেও একটা বড় রকমের ত্রুটি রয়ে গেছে। আমার মনে হয় যে, তৃণমূল পর্যায় থেকেই বিষয়টি আসা উচিত। প্রাইমারী লেবেলের চেহারাটা আসলে কেমন- সে বিষয়টি যদি আলোকপাত করেন-

রোকেয়া কবীর

আমাদেরকে প্রথমেই মেথোডলজীর কথা চিন্তা করতে হবে। এর সাথে কিন্তু টিচারদের স্কিল্ড, ক্যাপাসিটি, নলেজ, ইনফরমেশন-এই চারটি জিনিস বেসিক্যালি জড়িত। সুতরাং, এগুলোও কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের সাথে জড়িত। এ কারণে এটিও একই সাথে চিন্তা করতে হবে। আর একটি দিক হচ্ছে, সামাজিক বিষয়াবলী এবং সে সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের ধারণা। যেমন, আমরা যদি ট্রাফিক আইন শেখানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশকে প্রাইমারী স্কুলে এনে কোন ক্লাসে বা সব ক্লাস এক করে একটা সময় তাদেরকে নিয়ে যদি আলাপচারিতায় যাই তবে উভয়ের মধ্যে কিন্তু একটা দাযিত্ব বোধ তৈরি হবে। পুলিশের মধ্যেও ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটা রেসপন্সিবিলিটি গ্রো করবে এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এক একটা বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সামাজিক এমন নানা বিষয়গুলো সম্পর্কে একই পন্থায় একটা যোগসূত্র স্থাপন এবং শিক্ষাদান সম্ভব। সুতরাং, শিক্ষকদের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদেরকেও ট্রেইন্ডআপ করা প্রয়োজন।

ইমদাদুল হক মিলন

ড. করুণাময় গোস্বামী স্যার, আপনার কাছে জানতে চাইছি আমাদের যে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ আছে, সেখানে যারা কাজ করছেন, টিচারদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের ভূমিকা কতটুকু, তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতিটা কতোটা কার্যকর?

karunamoy[1]

ড. ক রু ণা ম য়  গো স্বা মী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ঢাকা

আমি অনেক সময়ই দেখেছি যারা বি.এড, এম.এড ট্রেনিং পাননি তারাই ট্রেনিংপ্রাপ্তদের থেকে ভালো করছে। ফলে আমার মনে হয়েছে, এই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কেন? কি তাদের টার্গেট এটি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আমি যেসব শিক্ষকের কাছে পড়েছি তারা কেউ কোনদিনও বি.এড, এম.এড করে যাননি এবং বি.এড, এম.এড করেছেন এমন অনেক শিক্ষককে দেখি তারা সাধারণ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারে না। আমি যে লোকটাকে ট্রেনিং দিচ্ছি-কেন ট্রেনিং দিচ্ছি, কি ট্রেনিং দিচ্ছি, সে এই ট্রেনিং শেষ করে কি ডেলিভার করবে, তা কিন্তু ভাবতে হবে। নায়েমে এক ধরনের ট্রেনিং দেয়া হয়-নিয়ে যায়, ব্যায়াম করায়-এ করায় তা করায়। এভাবে এক মাসের একটা ট্রেনিং করায়, কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়-যা সম্পুর্ণ অর্থহীন। তাই আমার মনে হয় শিক্ষানীতির মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং প্রসঙ্গে একটা পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। যে যে সাবজেক্ট পড়াবেন তাকে সে সে বিষয়ে পারদর্শী করে তোলা দরকার। তা না হলে আমরা আমাদের কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষিতের হার বাড়ছে কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না। এখন একটি ছেলে বা মেয়েকে যদি অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে হয়, ইংল্যাণ্ডে কাজ করতে হয়, কানাডায় কাজ করতে হয় তবে তাকেতো সেখানকার মতো করে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলে তবেই না সেখানে পাঠাতে হবে। তারপরও যেটুকু বাকী থাকে সেটুকু সে ওখানে গিয়ে বুঝে-শুনে শিখে নিতে পারবে। অর্থাৎ এখন আমাদেরকে সে বিষয়ের প্রতিও নজর দিতে হবে। শিক্ষানীতির যে কথাটা উঠেছে, শিক্ষানীতিতে সে বিষয়টির দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। বিদেশে যে ছেলেমেয়েরা যাবে এটি ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার কতটুকু ফ্যাসিলেটেট করতে পারবে সেটি নির্ধারণ করা দরকার। আজ যে কথা আসছে বিদেশে শুধু উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করতে যেতে পারছে। এখন প্রশ্ন-উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোক সংখ্যা কত বাংলাদেশে? নিশ্চয়ই খুব বেশি নয়? তাহলে বৃহৎ অংশ হচ্ছে নিম্নমধ্য বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোটি কোটি মানুষ। তাদের ছেলেমেয়েরা যদি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে না পারে তবে তো দেশ পিছিয়ে পড়বে। দেশ সামগ্রিকভাবে জাগতে পারবে না। আমরা চাই, সমাজটা পুরোপুরি ভাবেই জাগবে। সব মানুষ জাগবে। তার জন্য সরকারকেই সাপোর্ট দিতে হবে। এছাড়া সরকার যদি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে এমন একটা চুক্তিতে আসতে পারে যে, ‘এই পরিমাণ’র আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদি বিদেশে লেখাপড়া করতে যায় তবে তাদেরকে ‘এই পরিমাণ’ অর্থের সংস্থান তোমরা করবে। যাতে ভিসার জন্য তাদেরকে না আটকায় বা অন্যান্য সমস্যা না হয়। একটি কথা আসতে পারে যে, বিদেশে না পাঠিয়ে আমাদের এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা যায় কিনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান বাড়ানো যায় কি না, শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু করা যায় কি না এবং উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় কি না? তা করতে পারলে ভালো এবং তা আমাদের জন্য প্রয়োজন, অবশ্যই প্রয়োজন। তবে একটি বিষয় হচ্ছে যে, যে শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়ে পড়তে চাইবে আমরাতো তাকে বাঁধা দিতে পারি না। আর একটি দিক হলো, আমাদের দেশে কোন ভালো কোম্পানিতে বা সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানেও যদি কোন চাকরিতে বিদেশ থেকে ডিগ্রী নেয়া কোন ছেলেমেয়ে এবং দেশ থেকে ডিগ্রী অর্জন করা কোন ছেলে/মেয়ে একই সাথে এপ্লাই করে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদেশ থেকে ডিগ্রী অর্জিত ছেলেমেয়েটি এগিয়ে থাকবে। এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদেরকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে। আরেকটি দিক হলো কমশিক্ষিত ছেলেমেয়েকে কারিগরী দক্ষতা ও ইংরেজী শিখিয়ে বিদেশে কাজের জন্য পাঠানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারকেই নিয়মনীতি করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর এতেই দেশের লাভ হবে বেশি। কারণ, একটা উচ্চশিক্ষিত ছেলে কিছুদিন বিদেশে থাকার পর সে সেখানে একটা গাড়ি কিনবে, বাড়ি কিনবে, তারপর এদেশের বাড়িঘর বিক্রি করে সে টাকাও ওখানে নিয়ে গিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করবে। এই তো আমাদের দেখা। সুতরাং, গরীব ঘরের ছেলেমেয়েদের সাপোর্ট করা দরকার। তাতে দেশও লাভবান হবে।

ইমদাদুল হক মিলন

ডঃ করুণাময় গোস্বামীর আলোচনা থেকে আমরা একটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া দরকার এমন একটি ধারণা পেলাম-তাহলো, সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেরই শিক্ষার জন্য সরকারী ব্যবস্থাপনাটাও এমন হওয়া দরকার যাতে তারাও যেন বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং তাতে করেই দেশ অধিক লাভবান হবে।

monwar3[1]

ড. এ. কে ম নো ও য়া র  উ দ্দী ন  আ হ মে দ

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের এমন একটি শিক্ষানীতি থাকতে হবে, যেটি বস্তুনিষ্ঠ, বিজ্ঞানভিত্তিক একটা রেসনাল শিক্ষা ব্যবস্থা হয়। তার মধ্যে গ্রাম এবং শহরের একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে। আগে একটা গ্রামের ছেলে বোর্ডে ফার্স্ট হতো। এখন কেন হয় না? আবার নারী-পুরুষের চ্যালেঞ্জ থাকতে হবে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক-এদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেছেন, জন্মসূত্রেই হচ্ছে এদেশের মেয়েরা কম বুদ্ধিসম্পন্ন। যখন কি না আমাদের উচ্চ আদালতে ৫/৬ জন বিচারক আছেন মহিলা। দক্ষতার দিকেও তারা অনেক ভালো। এছাড়া আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো পদে নারীরা রয়েছেন। আমি বলছি, আমাদের শিক্ষানীতিতে গ্রাম আর শহরের চ্যালেঞ্জ ও নারী-পুরুষের চ্যালেঞ্জ থাকতে হবে। এটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এবং বিদেশে শিক্ষার ব্যাপারেও আমাদের মেয়েদেরকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। এখন বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বলতে আমরা কি বুঝি তা আমাদেরকে নির্ধারণ করতে হবে। বাজারে যদি কেরোসিন, সয়াবিন, বাটারওয়েল বা গাওয়া ঘি একদামে বিক্রি হয় তাহলে তো হবে না। অর্থাৎ বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদেরকে পাঠাতে হলে আগেই নির্ধারণ করতে হবে সে কোন দেশে, কোন মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কি ধরনের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করতে যাচ্ছে, তার জন্য কোনটা উপযোগী সেই বিষয়টি। বিদেশীরা আমাদের দেশের বাংলা সাহিত্য যদি জানতে চায়, ঐতিহ্য সম্পর্কে যদি জানতে চায়, বা আমাদের সমাজ সম্পর্কে জানতে চায় তবে বিদেশীরাও আমাদের দেশে এসে শিক্ষাগ্রহণ করবে, আমরা যদি সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি। এরপরও আমাদের দেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কারা যাবে তা নির্ধারণ করা দরকার। এগুলো কিন্তু আমাদের শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই। আর একটি জিনিস হচ্ছে আমাদের বাজেট এলোকেশনে বা নীতিতে নারী এবং নারীকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমি গত ১০ বছর শিক্ষকতা করতে গিয়ে দেখেছি যে আমাদের মেয়েরা এখন অনেক অগ্রগামী, অনেক প্রফেশনাল। তাই তারা যেন সামাজিক, পারিবারিক রাষ্ট্রীয়ভাবে সব দিক থেকে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় সে দিকটি নিশ্চিত হতে হবে। আর একটি দিক হলো-আমি মনে করিনা যে উচ্চ ডিগ্রীর ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের সিভিল সার্ভিসের কাউকে বিদেশে পাঠানো উচিত। আমাদের ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অথবা সাহিত্য চর্চার জন্য, ভাষা চর্চার জন্য কিংবা দর্শন শাস্ত্র চর্চার জন্য যদি কেউ বিদেশে যেতে চায় সেটি আলাদা কথা।

একই সাথে আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আইন দিয়ে হবে না। পরিশেষে গুরুত্বারোপ করতে চাই বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ব্যাপারটিতে। কারণ মনে রাখা দরকার- ইউ,কে’র ডিগ্রী কিন্তু দুই ধরনের। একটি হলো ‘ইউনিভার্সিটি অব করাচী’ আরেকটি হলো যুক্তরাজ্যের নামকরা কোন ইউনিভার্সিটি। সুতরাং, সব ইউ,কে’র সার্টিফিকেট এক করে ফেললে কিন্তু হবে না। ইউ,কে’র মানেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে তারপর মূল্যায়ন। আমরা প্রায়ই সেই ভুলটি করে বসি। নিজেকে এবং অপরকে উভয় ক্ষেত্রে মূল্যায়নের দিক থেকেই।

জু বা ই দা  গু ল শা ন  আ রা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা-আমি প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলাম যে, সাধারণ শিক্ষার বিষয়ে আমাদের আলোচনাটা থাকবে এবং আমি হয়তো সেভাবেই কথাটা বলতে চাইবো আপনাদের কাছে। কারণ, আমি যা ভাবি তা আমি শেয়ার করতে চাই তাদের সাথে, যারা আমার মতো দেশকে ভালোবাসেন এবং শিক্ষা সম্পর্কে ভাবেন। আমার পূর্ববর্তী বক্তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, আপনি অনেক আত্মনিন্দা করেছেন শিক্ষক জাতির প্রতি। আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি, কারণ এখনো অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক। তারা অনেক সুযোগ পেয়েও বিদেশে যাননি। তাঁরা দেশে ছাত্র তৈরী করেছেন; তাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাঁরা দু’একটা ভুল করতেও পারেন, ‘ঢাকার রাজধানী করাচী’ বলতেও পারেন কিন্তু তাদের সে ভুলকে আমরা ধরে রাখতে চাই না। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকুক। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতে পারে, সে মনোভাব তাদের মধ্যে তৈরী করা আমাদের প্রত্যেকেরই একটা কর্তব্য। আমার যেটুকু মনে হচ্ছে যে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা- আপনি চান বা না চান, আমি চাই বা না চাই ছেলে-মেয়েরা যাবেই। তারা যেতে চায়, উন্নত দেশগুলো তাদের ডাকছে। ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী- যাবেই তারা। কিন্তু আমরা এমন পরিবেশ তো তৈরী করতে পারি, যাতে বিদেশীরা মুগ্ধ হয়ে যায় যে, বাংলাদেশে এমন শিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে, এমন শিক্ষক রয়েছেন, এমন শিক্ষা পরিচালনা পরিষদ রয়েছে- যাদের কাছে আমরাও শিখতে পারি। এই তো গতকাল আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে একটি চীনা ছাত্রী বাংলায় অনুবাদ করে একটি চীনা প্রেমের গান আমাদের শোনালো। বিদেশ থেকে তো ছাত্ররা আমাদের দেশে আসছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও যাচ্ছে ঠিক আছে, তবে সেটা যেনো ভীতিকর পর্যায়ে চলে না যায়- সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আসলে বিদেশীরা আমাদের মেধাগুলোকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই হচ্ছে কঠিন এবং নিষ্ঠুর সত্য। এই পচা ভলভলে কাদার দেশ; সেই দেশের ব্রেনগুলোকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমার পুরো পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত, কাজেই আমি সবারই কথা কিছু কিছু জানতে পারি। ছেলে-মেয়েরা আসে এবং বলে যে, আপা জিপিএ-৫ পেয়েছি, চলে যাচ্ছি, কয়েক লাখ টাকা লাগবে, তবে আমি ফিরে এসে দেশকে সেবা দেবো। আমি মনে মনে বলি, তুমি তো বাবা আর ফিরবে না। কেউ গিয়ে বিদেশ থেকে টেলিফোনে জানায়, আপা আমি একটা গাড়ি কিনেছি। আমি তাকে প্রশ্ন করি, তুমি না বললে, দেশে ফিরে আসবে? উত্তরে সে বললো, ঋণ করে গাড়িটা কিনেছি, ঋণ শোধ না করে ফিরে আসি কি করে? অর্থাৎ সেই গাড়ির ঋণ, এরপর বাড়ির ঋণ, বিয়ের ঋণও হতে পারে, সুতরাং এই যে মোহ, এ মোহ আমরা কাটাতে পারিনি। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই কিন্তু আমরা এই মোহে নিমজ্জিত রয়েছি। অনেকেই অনেক কথা বলে যায়, শিক্ষা অর্জন শেষে দেশে ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করবো- দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমি তা মানতে পারি না। যারা যায়; তারা পয়সা বানাতে যায়, যারা যায় তারা গুড লিভিং-এর জন্য যায়, যারা যায় তারা ভালো থাকার জন্য যায়। আর এই আমরা বলতে চেষ্টা করছি যে, আমাদের শিক্ষানীতিতে কি রাখবো, কেনো যাবে? তাদের খুশি; তারা স্বাধীন, তাদের জন্যই তো আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি। তারা যাবে, বেড়াবে, থাকবে ব্যস। চলে আসবে, না হলে আসবে না। আমার কথা হচ্ছে, আমরা যেনো তাদের কাছে প্রত্যাশা না রাখি। তবে দু’একটা কথা আমি এখানে বলা খুবই জরুরী মনে করি। শিক্ষানীতিটা আসলে কি? আসলে কি আমাদের কোনো শিক্ষানীতি আছে? জাতীয় শিক্ষানীতি তো নেই আমাদের। আমার জীবনের ত্রিশ বছরের অধিককাল আমি ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছি, কিন্তু কই আমি তো কোনো শিক্ষানীতি পেলাম না। কোথায় সে শিক্ষানীতি, সে অলৌকিক শিক্ষানীতি? আমি সেই শিক্ষানীতি চাই, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি তেমন করে হয়নি। ঐ একটা করে আসে কিছুদিন চলে টলে তারপর আবার কোথায় চলে যায় সেটা সেই জানে। আমি যেটা চাইবো তা হলো, বিশ্বের যোগ্য সার্বজনীন কর্মসক্ষমতা যাতে শেখানো যায় তারই যোগ্য হওয়া উচিত আমাদের শিক্ষানীতি। তাতে আমার দেশকেও আমি কিছু দিতে পারবো বিদেশে গিয়েও কাজ করতে পারবো। মোট কথা, সত্যিকারের কর্মী হয়ে যেনো আমি বিদেশে গিয়েও কিছু করতে পারি, আমার দেশকেও যেনো কিছু দিতে পারি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আসবে যে, প্রত্যেকটা দেশের বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত আছে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যাবলী আছে, সেদিক থেকেও চিন্তা করে আমাদের শিক্ষানীতি কি হয়েছে? আমার তো মনে হয়, আমাদের প্রথম কর্তব্যই হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করা। আমাদের এ নিয়ে তো রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি তোলা উচিৎ, আমাদের শিক্ষানীতি কই? আমাদের শিক্ষানীতি দেন।

প্রাইমারী লেবেলে কি হবে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক লেবেলে কি হবে, ইউনিভার্সিটি লেবেলে কি হবে, বিজ্ঞান শিক্ষায় কি হবে? আমরা কি কখনো সেভাবে কাজ করতে পেরেছি? আমি তো কোথাও সেই শিক্ষানীতি পাইনি। প্রাইমারী লেবেলে টিচাররা আজ ছাত্রদের ইন্ডিয়ান বই পড়িয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এটা হলো তাদের শিক্ষানীতি। ওরা শেখাবেন যে, ঢাকার রাজধানী দিল্লী। তারা তাদের শিক্ষানীতি পরিচালনা করে যাচ্ছেন। একেকটা স্কুল, কলেজ খুলে আমাদের ছেলেমেয়েদের যার যা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। আমার শিশু কি শিখলো তা হলে? জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমার যেটা মনে হয় যে, জীবনের ছোট ছোট স্বাক্ষরতাই হচ্ছে প্রথম শর্ত। যেটা নিয়ে আমাদের প্রথম কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি, তা হচ্ছে স্বাক্ষর হওয়া। তবে স্বাক্ষর হওয়া মানে আমার নাম আজিমুদ্দিন মোল্লা-ব্যস এটুকুই তা নয়। যে স্বাক্ষরতা আমাকে জীবনের সমস্যাগুলোকে ফেস করতে শেখাবে, আমি বুঝতে পারবো যে, এটুকু শিখলে বা এইটুকু বললে আমি আমার জীবনটাকে চালিয়ে নিতে পারবো এবং ছেলেটাকে জীবনের কোথাও দাঁড় করিয়ে দিয়ে যেতে পারবো, তাকে আমি বলবো শিক্ষানীতির প্রথম শর্ত। স্বাক্ষরতার পরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বৃহত্তর সুফল বয়ে আনে, আত্মসম্মানবোধ জেগে ওঠে, জেন্ডার ডিফারেন্টটা দূর হয়- এই বিষয়গুলোকে নিয়েই শিক্ষানীতি গড়ে তোলা উচিৎ। বয়স্ক শিক্ষানীতি- আমার ভালো লাগে। যখন দেখি, হারিকেনের আলোতে কোথাও কোথাও কৃষকেরা পড়াশোনা করছে। কোথাও কোথাও আমরা তো কাজ করছি, সফলও হচ্ছি, একেবারেই যে ব্যর্থ তা তো নয়। আমাদের বাস্তবতাই হচ্ছে আমাদের শিক্ষা, থিওরি নয়। আমাদের শিক্ষানীতি এমন হবে, আমরা দুনিয়াতে চলতে পারবো, যেকোনো কিছুর মোকাবেলা করতে পারবো। আমরা টেকনিক্যাল শিক্ষা নেব, বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা নেবো। এটাই তো আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের আসল শিক্ষানীতি হওয়া উচিত।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

আপা, আপনার এই কথার প্রেক্ষিতে আমার জিজ্ঞাসা হচ্ছে, আমরা এই যে শিক্ষানীতির কথা বলছি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদেরকে বলা হয়েছে শিক্ষানীতির কথা, আপনি যে নারী-পুরুষ বৈষম্যের কথা বললেন, আপনি যে কারিগরী শিক্ষানীতির কথা বললেন, আমরা কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে শিক্ষানীতির কথা শুনেছি, ভালো শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতির কথা শুনেছি, আদতে আমরা কি তা পেয়েছি? আসলে আমাদের সেই শিক্ষানীতি কে দেবে? কাদের মাধ্যমে আমরা পেতে পারি আমাদের কাঙিক্ষত সেই শিক্ষানীতি? আমার মনে হয়, এ বিষয়টির ওপর আমরা আলোকপাত করতে পারি।

জুবাইদা গুলশান আরা

ধন্যবাদ নীরু তোমাকে একটি সুন্দর বিষয় উত্থাপন করার জন্য। তুমি খুব একটা ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো আমাকে। আমি মনে করি, বিভিন্ন পেশার লোকদের নিয়ে সরকার একটা টাস্কফোর্স তৈরী করতে পারে, যারা শিক্ষা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন এবং নানাভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত। তবে এটা নিয়ম রক্ষার কোনো টাস্কফোর্স হবে না, হবে সত্যিকারার্থে শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে একটা প্রকৃত শিক্ষানীতি প্রণয়নের টাস্কফোর্স। যারা গ্রামে যাবে, একেবারে মানুষের দ্বারে দ্বারে, তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনবে। সবকিছু মনিটর করবে। মনিটরিংটা খুব গুরুত্বের সাথে হতে হবে। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে আমি একটা ব্যাপার খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি তা হলো, আমাদের দেশে স্কুল লেবেলের শিক্ষা পদ্ধতিটা একেবারে সীমাবদ্ধ। ছেলে মেয়েরা প্রবল চাপের মধ্যে লেখাপড়া করছে। আমি মনে করি, ছুটির সময় আমাদের দেশের শহরের ছেলেমেয়েদেরও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় বেড়াতে না নিয়ে গিয়ে গ্রামে নিয়ে একটি মাস জীবনভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে। তারা নদী দেখবে, পুকুর দেখবে, সাঁতার কাটতে শিখবে, আনন্দে থাকবে। একটি মাস তারা প্রকৃতিভিত্তিক জীবনের সান্নিধ্যে থাকবে, যে টমেটো তারা খায়, সেটা কিভাবে ফলানো হয়, কারা কাজ করে এটা ফলায়, কিভাবে ফলায় সেটা দেখবে, শিখবে- আমি মনে করি আমাদের স্কুল লেবেলে এটার ভীষণ প্রয়োজন রয়েছে। আমরা কেন কড়া হতে পারবো না আমাদের নীতির বিষয়ে? আমার মনে হয় ভালো করার ইচ্ছে থাকলে, আর সকলের একত্রিত চিন্তা ও চেষ্ঠা থাকলে নিশ্চয়ই আমরাও পারবো।

shafikul-i[1]

প্র ফে স র  ড.  মোঃ  শ ফি কু ল  ই স লা ম

অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমি মনে করি নিচের ক্লাসে যারা শিক্ষা দেন তাদের শিক্ষাটাই আসল শিক্ষা। প্রাইমারীতে আমি যে শিক্ষা অর্জন করেছি গ্রাম থেকে, সেটিই আমার আসল শিক্ষা। সে সময় আমাদের শিক্ষকদের পণ্ডিত বলা হতো। শিক্ষক বলা হতো না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য আমার যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাকালীন আমার মনে পড়ে না যে কোন শিক্ষক আমাকে একটা উপদেশমূলক কথা বলেছেন। দুঃখিত আপনারা কিছু মনে করবেন না এ কথার জন্য। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একটি জিনিস দেখেছি যে, কিভাবে ছাত্ররা রাজনীতি করে এবং শিক্ষকরাও সেই ধারায় চলেন বা উৎসাহ দেন। সে ইতিহাস আর বলতে চাই না। আমি সামরিক শাসনের মধ্যে পড়াশোনা করেছি সে সময়ের কথা আপনারাই ভালো জানেন। যা হোক, শিক্ষানীতিতে নিচের ক্লাসে থেকেই আনা উচিত-‘না’ কে এভয়েট করা। অর্থাৎ ‘নো নেগেটিভ’। যেমন, ‘অপরের নিন্দা করিও না’ এটি না বলে বাচ্চাদেরকে আমরা যদি শেখাতে পারি ‘অন্যের প্রশংসা করো’। আমার মনে হয় আমাদের ছোট বেলায় যদি আমাদেরকে এরকম কিছু শেখানো হতো আমরা হয়তো বর্তমানের চেয়ে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারতাম। তবে এখন আমাদের এই প্র্যাকটিসটা শুরু করা দরকার যে ‘মিথ্যা কথা বলিও না’ এটি না বলে ‘সত্য কথা বলিও’ এই যে পজেটিভ সেন্স-এফারমেটিভ, এগুলি ছেলেমেয়েদের শেখানো উচিত।

এখন দেশেই অনেক উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে, আর সবাইকে দেশের বাইরে দৌড়াতে হচ্ছে না। দেশেই সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে তুলনামূলক কম খরচে। এটি একটি ভালো দিক। তবে এখন প্রয়োজন দেশের সকল বিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায় একই কারিকুলাম অর্থাৎ জাতীয় কারিকুলাম করা যায় আণ্ডার গ্রাজুয়েট লেবেলে এবং এক্ষেত্রে যদি বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা যায় যে, এভাবেই চলতে হবে। তবেই আমার মনে হয় দেশেই ভালো শিক্ষাদান সম্ভব এবং এর মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের বিদেশে যাওয়াও কমবে। দেশের মেধাবী সম্পদ বাঁচবে, বাঁচবে টাকা। আর বিদেশে যদি পাঠাতেই হয় তবে মেধার ভিত্তিতে পাঠানো উচিত। এ নীতি করতে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অথচ সরকারী বৃত্তি নিয়ে এম,এস/পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনে তারাই অগ্রাধিকার পায় যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। আমরা যদি শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে গন্য করি তবে অবশ্যই শিক্ষকদেরকে বিভিন্ন কর্মশালা অথবা বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তবে শর্ত থাকবে যে তারা অবশ্যই দেশে ফিরে শিক্ষা ও গবেষণায় কর্মরত থাকবেন। শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণ করে বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা উচিত।

chinu[1]

হো মা য় রা  চি নু

ফার্ষ্ট এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড

আমি তিনটি স্কুলে আমার তিনটি বাচ্চাকে পড়াই। সব থেকে বেশি খারাপ লাগার কারণটি হলো বাচ্চাদের বসার ব্যাপারটা। মেয়েরা আলাদা, ছেলেরা আলাদা। এই যে জেন্ডার, এটা কেন হবে? বাচ্চারা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই একটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এটা কেন? তারা বন্ধুর মতো হবে। সবাই তো মানুষ, তাদেরকে আলাদা করা হবে কেন? মেয়েদেরকে খেলতে দেয়া হয় পুতুল দিয়ে ছেলেদেরকে ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন দিয়ে। খেলার জায়গাটাও আলাদা। ওর স্কুলে খেলার মাঠ নেই, ওর শরীরচর্চা হচ্ছে না। যে কম্পিউটার আছে তাতে মেয়েদেরকে শুধু পুতুল খেলাটাই খেলতে দেয়া হয়। কেন? তাকেও গাড়ী খেলতে দাও। এই যখন স্কুলগুলোর অবস্থা তখন আমি কিন্তু বাসায় তাকে আলাদা করে দেখছি স্কুল থেকে। সচেতন একজন অভিভাবক হিসেবে আমার বাসায় ছেলেমেয়ে কোন বিভেদ নেই। সমান অধিকার। এই সমান অধিকারের বিষয়টি স্কুলে বা সে যে জায়গাগুলোতে চলাফেরা করে বা বড় হলে চাকরী ক্ষেত্রে অথবা আমাদের প্রত্যেকটি জায়গাতে যদি মেয়েদের এই সমান অধিকার নিশ্চিন্ত হয় তবে তাদের মনটাও অনেক বড় হবে। তারা আমাদের সমাজকে আরো বেশি কিছু দিতে পারবে। আমার বাচ্চা বেলে মাটি, এঁটেল মাটি, দোঁ-আশ মাটি চেনে না। আমি ফুলের টব থেকে মাটি সংগ্রহ করে তাকে দেখাচ্ছি।

ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে বাচ্চারা ক্লাস ওয়ানে পরীক্ষা দিতে গেছে। তাকে এত কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে যেন সে ক্লাস সিক্সে পড়ে। তার যে ম্যাথমেটিক্স আসে যে ইংরেজী আসে বা অন্যান্য যা যা আসে তা বোঝানো আমার জন্যও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ বিষয়গুলো আমাদেরকে ভাবতে হবে। শিক্ষা নীতিতে এ সকল বিষয়ে কি কি হবে, তার একটা দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। ছয় বছরের বাচ্চার জন্য তার উপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষা পদ্ধতি থাকা উচিত। তাকে যেন লেখাপড়া নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকতে না হয়। স্কুল করছে, কোচিং করছে- তারপর বাড়ীতে এসেও পড়ার অধিক চাপ কমাতে হবে। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন দরকার। তাকে যোগ বিয়োগ খাতা কলমে না শিখিয়ে কাঠির মাধ্যমে শেখাতে হবে। খেলনা দিয়ে শেখাতে হবে। অর্থাৎ মেথডিক্যাল পদ্ধতিতে শেখাতে হবে। তাহলে সে শিখবে, আগ্রহ সহকারে পড়বে। কারণ, তখন সে পড়ার মধ্যেই মজা খুঁজে পাবে। সে পড়তে আগ্রহী হবে। যখন তাকে কাড়ি কাড়ি বই ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন যে বেসিক জিনিসটি জানার পরিবর্তে মুখস্ত বিদ্যায় অভ্যস্ত হতে চাইছে। আর এভাবেই তারা পিছিয়ে পড়ছে। তাই প্রয়োজন এই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন।

nasea[1]

আ বু  না সে র  খা ন

চেয়ারম্যন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন

আমাদের বিশাল জনসংখ্যা। যেহারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামীতে এদেশে বসবাসের জন্য এতো মানুষকে জায়গা করে দেয়া সম্ভব হবে না। সুতরাং যারা বিদেশে যেতে চায় তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিত। তারপরও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে দেশের প্রায় ওয়ান থার্ড থেকে হাফ জায়গা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। তবে একটা আশার দিক হলো, আমাদের বাবা-মায়েরা বিশেষ করে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদেরকে পড়াশোনার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। যেটি কখনও কখনও ছেলেমেয়েদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটি কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। সেজন্য আমার মনে হয় একটি পর্যায় পর্যন্ত ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা দিতে হবে। জ্ঞান অর্জনের আকর্ষণটা বাড়ানোর জন্য শিক্ষা দিতে হবে। তবে একটা পর্যায়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য যেটি দরকার তা হলো, একটি কমিশন গঠন করা। আগামী ২০ বছর পরে ইণ্ডিয়া, চায়না বা ইউরোপ অথবা আমেরিকাতে কোন ধরনের ম্যান পাওয়ারের প্রয়োজন হতে পারে সেদিকটিতে লক্ষ্য রেখে কিন্তু আমাদের সাবজেক্টগুলো চুজ করতে হবে। এগুলো নিশ্চই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর পক্ষে সম্ভব নয় বা তারা করবেও না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট বা এ ধরনের বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে অগ্রীম ঐ বিষয়গুলো চালু করার দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া আমাদেরকে বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপারে নজর দিতে হবে। এখানে খুব দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বুয়েটের কোন টিচারকে আমি দেখিনি কোন ইণ্ডাস্ট্রিতে কোনদিন কাজ করতে। আমি বলছি না যে, তারা ভালো পড়ান না। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অন্য জিনিস। আমি অস্ট্রেলিয়াতে দেখেছি রাশিয়াতে দেখেছি একজন টিচার বিশেষ করে যারা প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত, গায়ে অনেক ময়লা কাপড় নিয়ে হয়তো তিনি ক্লাসে আসছেন। মানে তিনি বাস্তবে কোন কলকারখানা বা এ জাতীয় কোথাও কাজ সেরে তবে ক্লাসে ফিরছেন অর্থাৎ বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে অন্যকে বা ছাত্রছাত্রীদেরকে জ্ঞানদান করাটাও কঠিন। তাই আমার মনে হয় বুয়েটের টিচারদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে এবং যারা টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে শিক্ষাদান করে থাকেন সেসব শিক্ষকদেরকে বাস্তব অভিজ্ঞতার জায়গাটি অর্জন করার জন্য বাস্তব পরিস্থিতিতে কাজ করা দরকার। আর নরমাল বিএ, এমএ পাস যারা আছে তাদের ক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে সেটি চিন্তা করতে হবে। কারণ তারা একটি মধ্যম অবস্থায় পড়ে আছে। একদিকে তারা যেমন নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে পারছে না অন্যদিকে সমাজের জন্যও তারা কিছু করতে পারছে না। একটা বিএ পাস ছেলে বা মেয়ে-না পারছে ছোট কিছু করতে না পারছে বড় কিছু করতে। সুতরাং, এটি থাকবে কিনা বা এক্ষেত্রে কি হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আর একটি বিষয় হলো স্পেশালাইজেশন। আমাদের দেশে স্পেশালাইজেশন খুব প্রয়োজন কিন্তু ইন্টিগ্রেশনটাও খুবই প্রয়োজন। একটু আগে আলোচনায় যেটি এসেছে যে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে বাংলা, ফিলোসফি বা এ ধরনের সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয় না। এটি কিন্তু ঠিক না। এগুলো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরী। আমি একটা ছেলেকে মানুষ করার জন্য পড়াশোনা করাবো তাকে যদি সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সুন্দর পরিবেশ দিতে না পারি, সে যদি তার পছন্দমত সাবজেক্ট বেছে নিতে না পারে তবে তো হবে না। আমাদের ছেলে মেয়েকে তো কোন ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কর্মকর্তা বানানো মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। মানুষ হতে হলে তাকে বেসিক যে সমস্ত সাবজেক্টগুলো, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য যা যা দরকার সেগুলো ভাবতে হবে এবং সঠিক পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো যে, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষক বিদেশে আছেন তারা দেশে ফিরে আসতে চান, তাদের বিদেশে কাজ করার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদেরকে যদি মোটামুটি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় তবে দেশ অনেক লাভবান হবে। এ বিষয়টি নিয়ে কিন্তু সরকারকে ভাবতে হবে। আমি আবারও বলছি আমাদের শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষকে মানুষ বানানোর জন্য, মানুষের সেবা করার জন্য, মানুষের দ্বারা সেবা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মাঝে পৌঁছে দেবার জন্য, বিশ্বের বুকে ভালো কাজের মাধ্যমে আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য, সর্বোপরি জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য।

zamali[1]

এ, কে, এম না জ মু ল  হ ক  জা মা লী

সেক্রেটারী জেনারেল, ফেড-ক্যাব, ঢাকা

সীমাবদ্ধ সম্পদের মধ্য দিয়েই প্রণীত হয় আমাদের শিক্ষানীতি। প্রত্যেকটি সরকারের উদ্দেশ্য থাকে একটি সুন্দর ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার। সেভাবেই প্রণীত হয়েছিল স্বাধীনতার পর ডঃ কুদরত-ই-খুদা, মফিজ উদ্দিন, সামছুল হক, ডঃ বারী এবং মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন সুপারিশ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের এই সুপারিশ কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বিশ্ব দরবারে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত আসনে জায়গা করে দিতে পারলে আমাদের এই সোনার বাংলা সগৌরবে তার ভীত তৈরি করে নেবে। বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই রয়েছে বস্তি ও ছিন্নমূল শিশু-কিশোররা। অশিক্ষিত এই শিশুদের অনেকেই পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে বেরিয়ে আসছে। এদের জন্য প্রাইমারী এডুকেশন প্রজেক্টে বস্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রণয়নের ব্যবস্থা চালু করা উচিত। প্রাইমারী থেকে এসএসসি পর্যন্ত বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার ফলে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে যথা শীঘ্রই একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভেতর অনেক হতাশা কাজ করে। তারা শিক্ষার পরিবেশ ও গবেষণামূলক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেকে হচ্ছে নেশায় আসক্ত, যোগ দিচ্ছে নোংরা রাজনীতিতে, জড়িয়ে পড়ছে সাইবার ক্রাইমে। এ সকল অভিশাপ থেকে তাদেরকে মুক্ত করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার উপর জোর দেয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজী শিক্ষাকে ও কম্পিউটারের ব্যবহারিক শিক্ষা প্রতিটি সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক করা উচিত। বাইরের যে সকল দেশে পার্টটাইম জবের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে চায় সেগুলো খুঁজে বের করে শিক্ষার্থীদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মগুলো। এসব শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম। বিদেশে গিয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না এরা পার্টটাইম চাকরি করে প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি টাকা উপার্জন করে থাকে। এরাই লেখাপড়া শেষ করে প্রতি মাসে ১ থেকে ২ লাখ টাকার বেতনে বিদেশে চাকরি করছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নিজে এবং সচ্ছল করছে পরিবারকে।

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা নিলে এবং যে সকল দেশের, দূতাবাস আমাদের দেশে নেই সেগুলো-আনার ভূমিকা গ্রহণ করলে পোশাক শিল্প খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে সরকারের শত শত কোটি সাপোর্টের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি আসবে এই খাত থেকে।

numan[1]

নু মা ন   আ হ ম্ম দ   খা ন

নির্বাহী পরিচালক, আইইডি

আমাদের কতগুলো সমস্যার মধ্যে একটা সমস্যা জনসংখ্যা, একটা সমস্যা হচ্ছে দারিদ্রতা। আগামী বিশ্বে আমাদের এই বিশ্বায়নের যুগে আমি চাই আর না চাই আমাকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবেই বিবেচিত হয়ে কমপিট করতে হবে বিশ্বনাগরিকদের সাথে। কাজেই আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে এবং দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে হলে এদেশে এমন একটা শিক্ষানীতি দিতে হবে যে শিক্ষানীতি আমার ভীত এবং আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করবে। আজকের গোল টেবিল বৈঠকের সঞ্চালক আগেও প্রশ্ন রেখেছেন, আমাদের দেশের শিক্ষানীতি কি হওয়া উচিত? আমি মনে করি এদেশের যে অধিক জনসংখ্যা তা, বাংলাদেশের এ ভূখণ্ডে ধারণ করার মতো নয়। আবার পাশাপাশি আগামী বিশ্ব যদি দক্ষিণ এশিয়ার হয়ে থাকে সেই সুযোগটিকেও মাথায় নিয়ে আমরা যদি এমন একটি দক্ষ জনসংখ্যা তৈরি করতে পারি তাহলে আমার দেশ এগিয়ে যাবে পাশাপাশি বিশ্বায়নের প্রতিযোগীতায়ও আমরা টিকে থাকতে পারবো। সেজন্যই আমি মনে করি, মৌলিক যে বিষয়টা, সেই প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেয়া উচিত। যদি আমাদের ছেলে মেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভীতকে মজবুত করতে পারে তাহলে পরবর্তী সময়ে সে বিদেশে যাবে, না দেশেই শিক্ষা গ্রহণ করবে-তা সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারবে। অর্থের বিষয়? আপনারাও জানেন আমরাও জানি যে, একজন মেধাসম্পন্ন ছাত্রের জন্য অর্থ সমস্যা হয় না। সে যে কোন ভাবে স্কলারশীপের মাধ্যমে হোক, লোন করেই হোক, সে যদি স্থির করেই যে সে বিদেশে যাবে তবে তার অসুবিধা হয় না। আমাদের মধ্যে কতগুলো ট্রেন্ড আছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার। সেগুলো হলো ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম, মাদ্রাসা শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ইত্যাদি। এগুলোকে একটা মেইন ষ্ট্রিমের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। যাতে করে মানুষ সৃজনশীল, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারে এবং বহুত্ববাদিতাও হতে পারে। যে কথা এসেছে, জেন্ডার সংবেদনশীল, পরিবেশবাদি, সমস্ত কিছু হতে পারে, একই সাথে সিভিক এডুকেশন যেটি পূর্বেই আলোচিত হয়েছে সেগুলো যাতে ধারণ করতে পারে। সেজন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষানীতিটাকে সাজানো উচিত। সঞ্চালক পূর্বেই আরেকটি প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, আমাদের শিক্ষকদের কি হবে?

আমার মনে হয়, শিক্ষকদের মধ্যে মেধার আকর্ষণ গড়ার জন্য বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে সেই মেধাকে যাতে আকর্ষণ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ব্যবস্থাপনা এটিও আমরা সবাই জানি গ্রাম বা শহরাঞ্চল সবখানেই কি চিত্র। সেখানে কিন্তু শুধু সরকার নয়, যারা সমাজটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে তারা আপামর জনগণের জন্য প্রয়োজন কোনটি সেটি খুঁজে বের করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য উদ্যোগী হতে পারে। আর শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, মেধা আকর্ষণ করার জন্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর জন্য সকলকে নিয়েই সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে আমাদের এ জনসংখ্যাকে যাতে জনসম্পদে পরিণত করতে পারি, সে আলোকেই আমাদের শিক্ষানীতিটা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

kasem[1]

অ ধ্যা প ক   এ ম.  এ  কা শে ম

অধ্যক্ষ, কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি, ঢাকা

আলোচনার প্রথমেই প্রশ্ন আসে আমাদের শিক্ষানীতিটা কারা করবে? আমার প্রস্তাব হচ্ছে-যারা শিক্ষা দান করছেন অর্থাৎ সেই শিক্ষক সমাজ তাদের দ্বারাই এই শিক্ষানীতিটা প্রণীত হওয়া উচিত এবং সেক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, কারীগরি শিক্ষা বা অন্যান্য যতরকম শিক্ষা আছে সবগুলো সেক্টর থেকেই প্রতিনিধি নিয়ে এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য আমার মনে হয় যে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শিক্ষানীতির অন্যান্য অনুসঙ্গের মধ্যে একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। তা হলো শিক্ষক কারা? সাধারণত যারা মেধাবী তারাই কিন্তু এই শিক্ষকতা পেশায় আসেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা যখন শুনেছিলাম যে যার নাই কোন গতি সে করে ওকালতি কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি যে কোথাও কোন চাকরি যে পাচ্ছে না সে তখন মাস্টারীতে এসে ঢুকছে। কারণ অন্য জায়গায় চাকরি নেয়ার যোগ্যতাটা তার নেই। তাহলে এই শিক্ষানীতির ভেতরে এমন কিছু থাকা উচিত যে কেউ চাইলেই সে শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারবে না। তাকে এ পেশায় আসতে হলে কোন পরীক্ষা, এক্রিডিডেশন বা কোন রকম স্বীকৃতি থাকতে হবে তার যোগ্যতার। তা না হলে সে এই শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারবে না। আবার একটা প্রশ্ন আসছে-এই মেধাবী লোকগুলো কেন শিক্ষকতা পেশায় আসবে? তাহলে মেধাবী লোকগুলোকে যদি আকর্ষণ করতে হয়, ধরে রাখতে হয় তবে তাদের জন্য আলাদা কোন বেনিফিটের ব্যবস্থা করতে হবে। যে একটি ছেলে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছে সে যদি অন্য কোন চাকরীতে জয়েন করে আর সেখানে যদি তার ১০ হাজার টাকা বেতন হয় তবে সে শিক্ষকতায় আসলে ১৫ হাজার টাকা বেতন পাবে। তাহলে সে ডেফিনিটলি আসতে আকৃষ্ট হবে যে, ওখানেতো বেতন/সুযোগ-সুবিধা বেশি। পাশাপাশি সমাজসেবা এবং শিক্ষকের মর্যাদা-সবই আছে, অতএব আমার জন্য শিক্ষকতাই সব থেকে ভাল। সুতরাং, এ বিষয়টি আমার মনে হয় শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন। আমরা সবাই জানি এদেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুব বেকার। আমি শুধু একটি বাস্তব উদাহরণ দিতে চাই-যেমন টেক্সটাইল একটা সেক্টর। আমরা বস্ত্র খাত বলি। এই খাতে সাড়ে চার হাজার বিদেশী আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে চাকরি করছে। অথচ আমাদের লোকরা বেকার। তাহলে এই সাড়ে চার হাজার লোক কিভাবে আসলো, কেন আসলো? কারণ, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতো বসে থাকবে না। একটা লোক যখন ইন্ডাস্ট্রি করে, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেতো সেটি বন্ধ রাখবে না। সে দুনিয়ার যেখানে যোগ্য লোক পাবে সেখান থেকেই নিয়ে এসে তাকে দিয়ে কাজ করাবে। এখন আমার দেশের লোক পারছে না। সুতরাং, আমাদের দেশে যে লেখাপড়াটি পরিচালিত হচ্ছে সেটি, যেখাতে এমপ্লয়মেন্টের প্রয়োজন আছে, ঐ দিকে কিন্তু আমাদের ম্যান পাওয়ার খুবই দুর্বল। এই যে প্রয়োজনীয় খাতে আমরা এদেশের দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছি না কেন? কারণটা হচ্ছে, আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থাগুলো আছে সেখানে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করার মতো সেই শিক্ষার পরিবেশ আমরা বজায় রাখতে পারছি না। শিক্ষার মান বজায় রাখতে পারছি না। আজকে যদি আমরা তাকাই যে এদেশের কয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররা কিছু শিখে বের হচ্ছে? এ প্রশ্নটা যদি আমরা রাখি তাহলে আমারতো মনে হয় যে, যেখান থেকে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়া হয়, এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কোন পার্সেন্টেসে আসবে না। তাহলে আমরা যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছি না সেখানে আমরা দক্ষ জনশক্তি কিভাবে সৃষ্টি করবো? সুতরাং, আমাদের শিক্ষানীতির ভেতরে এমন কিছু থাকার দরকার আছে যাতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যেন মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করে ছেলে মেয়েরা বের হতে পারে। আর বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, অবশ্যই বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য আমাদের দেশ থেকে যেতে হবে, যাওয়ার দরকার আছে। আমরা চাই বা না চাই মানুষ যাবেই এবং উচ্চশিক্ষা নিয়ে আসার পরে আমাদের যে অভিজ্ঞতা তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা লোক যে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছে, তার স্কিল্ডনেসটা, তার আউটলুকটা, তার চিন্তা চেতনা অনেক কিছুতেই ভিন্নতা এসেছে। ডেফিনিটলি হি ইজ বেটার। সুতরাং বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি রাখতে হবে। এটি না রাখলে আমরা এমনিতেই তো পিছিয়ে আছি আরো পিছিয়ে যাবো। আমি মনে করি, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে যোগ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা থাকাতো উচিৎ নয় বরং তাদের আরো কিভাবে সহায়তা দেয়া যায় এই বিষয়গুলোও আমাদের শিক্ষানীতি বা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আনা দরকার।

ইমদাদুল হক মিলন

ধন্যবাদ। আমার একটি অভিমত আছে। আপনারা সকলেই অত্যন্ত জরুরী বক্তব্য রেখেছেন। আমাদের শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে। আমার ছেলেবেলায় একটি উপন্যাস পড়েছিলাম, এটা অনেকেরই মনে থাকার কথা। মনোজ বসু নামে একজন লেখক একটি উপন্যাস লিখেছিলেন ‘মানুষ গড়ার কারিগর।’ তিনি শিক্ষকদেরকে ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ বলেছিলেন এবং এরকম একটি প্রচলিত কথা আছেও আমাদের মধ্যে যে, আমরা শিক্ষকদেরকে’ মানুষ গড়ার কারিগর বলি। এই ‘কারিগর’ শব্দটি নিয়ে আমার একটি অভিমত আছে। কারিগর শব্দটি নিয়ে আমি অনেকদিন ভেবেছি। আমার মনে হয় আমরা শিক্ষকদেরকে কারিগর না বলে “মানুষ গড়ার শিল্পী” বলতে পারি। কারিগররা যা তৈরি করেন তার মধ্যে প্রাণের প্রতিষ্ঠাটা হয় না যদি শিক্ষকদেরকে আমরা ‘মানুষ গড়ার শিল্পী’ গড়ে তুলতে পারি তাহলে প্রাণের প্রতিষ্ঠা সেখানে হবে এবং আমার মনে হয় যে, শিল্পী শব্দটার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক কিছু বোঝাতে পারবো যে তারা প্রকৃত অর্থেই আমাদের দেশের মানুষকে প্রাণের প্রতিষ্ঠাটা দেবেন, প্রকৃত আলোর পথটা দেখাবেন। এই আলোর পথ ধরে বাংলাদেশের মানুষ, বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।

এবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন সভাপতি মাহাবুবুল হাসান নীরু।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আজকের এই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত গুণী মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং আলোচ্য বিষয় সম্পর্কিত পরামর্শ শুনলাম। আমি মনে করি, এসব বক্তব্য ও পরামর্শের মধ্য দিয়ে যে দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে, তা একটি প্রকৃত ও সমৃদ্ধ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বিশেষ সহায়ক হবে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আপনারা যাঁরা এই আয়োজনে উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। আশা করি, আগামী দিনগুলোতেও বিভিন্ন সময়ে আমরা আপনাদের কাছে পাবো। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি এই গোলটেবিল বৈঠক। শুভ রাত্রি।

……………………………………………………………………………

গোলটেবিল বৈঠক নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্ট

শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগের অভাব রয়েছে

।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারি কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশকে অন্য দেশের বিজ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

২৬ মে ২০০৮, সোমবার গুলশানের স্টেক হাউজে দৈনিক ইত্তেফাকের এই নগরী ও বিএসবি ফাউন্ডেশন এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক জুবাইদা গুলশান আরা, ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের অধ্যক্ষ ড. করুনাময় গোস্বামী, কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজীর অধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ কাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. একে মনোওয়ার উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ফেড-ক্যাবের সেক্রেটারী জেনারেল একেএম নাজমুল হক জামালী, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ড. রোকেয়া কবীর, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ফাস্ট এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়রা চিনু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার এবং সভাপতিত্ব করেন এই নগরীর বিভাগীয় সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান নীরু।

অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা এবং ল্যাবরেটরি ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতার কারণে শিক্ষার মান উন্নত নয় বলেই অনেকই স্নাতক পর্যায়ে কলেজে ভর্তি হতে চায় না। দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হতে না পারলে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান এবং পরিবেশ উন্নত না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যায়। এদের বেশিরভাগই দেশে ফিরে আসতে আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার পর শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে আসলেও তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর তেমন সুযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, অতীতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে যারাই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেত তাদের বেশির ভাগই দেশে ফিরে আসত। এখন এ চিত্র ভিন্ন। এদের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে ফেরত আসছে না। এভাবে মেধা পাচার হচ্ছে। শিক্ষা কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে শিক্ষক ও গবেষণা কর্মীরা প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে পারছে না।

জুবাইদা গুলশান আরা বলেন, অনেক শিক্ষক সুযোগ পেয়েও বিদেশে শিক্ষার জন্য যান না। তারা দেশে থেকেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বিদেশে যায় তারা শিক্ষার জন্য নয়, বিদেশে যায় টাকা আয়ের জন্য, ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য।

করুনাময় গোস্বামী শিক্ষক প্রশিক্ষণের সমালোচনা করে বলেন, দেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি শিক্ষানীতিতে আলোচনা এবং কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অর্থবহ হতে হবে। সমাজের সবাই যেন উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ পায় এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

এম এ কাসেম বলেন, যে বিষয়ে কাজের সুযোগ আছে, শিক্ষার্থীরা সে বিষয়েই শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। শিক্ষকদের দিয়েই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা উচিত বলে তিনি মত দেন। তিনি বলেন, বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা উচিত।

একে মনোওয়ার উদ্দীন আহমেদ বলেন, মেধা-যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছে, তারাই এক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং পরবর্তীকালে শিক্ষা কমিশনের সদস্য হয়েছে। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশের যাওয়ার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, শিক্ষানীতি বিজ্ঞান ভিত্তিক হতে হবে এবং এ নীতিতে গ্রাম ও শহর, নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা থাকতে হবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে মেয়েদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দিতে হবে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে।

আবু নাসের খান বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সাধারণ বিএ, এম এ বিষয়গুলো রাখা ঠিক হবে না। তিনি কর্মমুখী শিক্ষার ওপর মত দেন।

নাজমুল হক জামালী বলেন, বছরে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। যেসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই এসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় স্থাপনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. রোকেয়া কবীর বলেন, শিক্ষা জাতির অধিকার এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নির্ণয়ের মানদণ্ড নিরূপণ করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান তিনি।

নুমান আহম্মদ খান প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দেয়ার দাবি জানান। লায়ন এম কে বাশার বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর দেশে শিক্ষা নীতি ঘোষণা করা হয়নি। শিক্ষা নীতি বিষয়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা নীতি গঠন করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম নীতি হয়নি।

হুমায়রা চিনু বয়স উপযোগী পাঠ্য বই ও শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, শিক্ষকদের মানুষ গড়ার শিল্পী হিসাবে তৈরি করতে হবে। তাদেরই আলোর পথ দেখাতে হবে। এই আলোর পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে

Leave a comment