• যতো লেখা

  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'সেরা দশ গল্প'। অসাধারণ দশটি গল্পের এক অনবদ্য উপস্থাপন। বইটি পড়তে ক্লিক করুনসেরা দশ গল্প
  • ছবি ফেলে আসা এবং চলমান সময়ের কথা বলে। ধরে রাখে সময়কে স্মৃদির ফ্রেমে। মাহাবুবুল হাসান নীরু অ্যালবামটি দেখতে ক্লিক করুনঅ্যালবাম
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'হৃদয়ছোঁয়া পঁয়ত্রিশ'। দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ আর মন-জমিনে দাগ কাটার মতো পঁয়ত্রিশটি ছড়া-কাব্য। বইটি পড়তে ক্লিক করুনকাছের মানুষ
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর খেলাধুলা বিষয়ক লেখা পড়ার জন্য ক্লিক করুনখেলা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর শিশুতোষ লেখাগুলো পড়তে ক্লিক করুনশিশুতোষ রচনা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর গল্প পড়তে ক্লিক করুনগল্প
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ছড়া পড়তে ক্লিক করুনE-BOOK
  • এক মাসের লেখা

মন্ট্রিয়লে সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরী’

 

২৫ নভেম্বর মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সাপ্তাহিক বাংলা মেইল আয়োজিত ‘প্রেক্ষাপট : কানাডা ও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক সময়োপযোগি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গোলটেবিল বৈঠক। সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মাহাবুবুল হাসান নীরুর সঞ্চালনায় বিষয়টির ওপর আলোচনায় অংশ নেন, ড. ওয়াইজউদ্দিন আহমেদ- প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি, ড. মহিউদ্দিন তালুকদার- সিনিয়র সায়েন্টিষ্ট, ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানী, ড. মাহতাব চৌধুরী- প্রফেসর, ফিনান্স ডিপার্টমেন্ট, ম্যাকগিল ইউনির্ভাসিটি, রেবেকা সুলতানা- প্রফেসর ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট, জন এবোর্ট কলেজ, ড. আমিন কবির- পোষ্ট ডক্টরাল রিসার্স ফেলো, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি। অবিভাবক : শামস রুস্তম, সিনিয়র ডিরেক্টর, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানুফ্যাচারিং, ল্যাবোফার্ম ইঙ্ক। শিক্ষার্থী : শাপলা বেগম, (লোকাল স্টুডেন্ট), একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট, কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি। ফারহানুল ইসলাম, (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট) ব্যাচেলর অব কমার্স, জন মলসন স্কুল অব বিজনেস। গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক কাজী আলম বাবু। প্রতিবেদন : সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের সৌজন্যে

 

মাহাবুবুল হাসান নীরু

শুভ সন্ধ্যা। সাপ্তাহিক বাংলা মেইল আয়োজিত এই চমৎকার, গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যময় গোলটবিল বৈঠকে আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা। আজ এখানে আপনারা শিক্ষক যারা উপস্থিত আছেন, প্রায় সকলেই অনেকদিন যাবৎ কানাডায় আছেন। কেউ কেউ এখানেই শিক্ষা জীবন শেষ করে শুরু করেছেন শিক্ষকতা জীবন। কানাডার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুদীর্ঘ সময় যাবৎ শিক্ষকতা করছেন। কেউ অতিবাহিত করছেন শিক্ষাজীবন। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং গুণী মানুষ আপনারা। নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কানাডার মতো বিশ্বের এই শীর্ষ দেশটির শিক্ষা জগতে রেখে যাচ্ছেন বিশেষ অবদান। প্রবাসে এই কৃতিত্বের জন্য নিশ্চয়ই আপনারা বাঙ্গালীদের অহঙ্কার। বাংলাদেশ আপনাদের জন্য গর্ববোধ করে।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর যে জাতি তার মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না, সে জাতি কোনো ক্ষেত্রেই রাখতে পারে না সাফল্যের স্বাক্ষর। কানাডার মতো এই উন্নত দেশটিতে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আপনারা যেভাবে আপনাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, বা এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা যে পরিবেশে; যে নিয়ম-নীতির মধ্যে লেখাপড়া করছে সেটা নানা কারণেই বাংলাদেশে আজ অসম্ভব। আপনারা এদেশের শিক্ষার পরিবেশ-পরিস্থিতি, শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতির পাশাপাশি নিশ্চয় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের শিক্ষার পরিবেশ-পরিস্থিতি ও চালচিত্র সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন। ইন্টারনেটের এ যুগে সে জানা-শোনার পরিধিটাও ব্যাপক। অপ্রিয় হলেও নির্মম সত্য যে, আমাদের দেশের শিক্ষাক্ষেত্র আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষাবিনাশী দানবের কালো থাবায় ক্ষত-বিক্ষত! এ থেকে কি কোনো মুক্তির পথ নেই? কানাডার মতো একটি বিশ্বের সেরা ও সমৃদ্ধ দেশে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার আলোকে, বিচার বিশ্লেষণে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়ন-উত্তরণের স্বার্থে আপনাদের কিছু বুদ্ধি-পরামর্শ থাকবে বলে আমি আশা করছি।

কানাডা ও বাংলাদেশ, আকাশ-পাতাল ফারাক। কী শিক্ষা, কি রাজনীতি, কি অর্থনীতি সব ক্ষেত্রে। বাস্তবিক অর্থে এর কোনো তুলনামূলক বিচার চলে না। আর স্বাভাবিকভাবেই সে বিচারে আমরাও যাবো না। মূলত এখানে আমরা আলোচনা করবো দুই দেশের চলমান শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র নিয়ে। আমি মনে করি, এ পর্যালোচনা থেকে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসবে যা আমাদের দেশের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারে; একই সাথে কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন। মূলত: সে উদ্দেশ্যেক সামনে রেখেই টরেন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা মেইল পত্রিকা আয়োজিত আজকের এই গোলটেবিল বৈঠক। বিষয়বস্তু হচ্ছে, ‘প্রেক্ষাপট : কানাডা ও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা’। আমি প্রথমেই অনুরোধ করবো ড. আমিন কবিরকে বিষয়টির ওপর আলোচনা করার জন্য।

ড. আমিন কবির

শুরুতেই আমি আমার অতীত ছাত্র জীবনের ওপর আলোকপাত করবো। সে সময় আমি কি করেছি বাংলাদেশে আর এখানে এসে কি করছি, সে কথাই আগে বলবো। আমার মনে হয়, আমি সিরিয়াস টাইপের লেখাপড়া করেছি মেট্রিক পর্যন্ত। রেজাল্টও বেশ ভালো করেছি। ইন্টারমেডিয়েটে তেমন একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি, কারণ ছিলো বাড়ী এবং বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া। এরপর ভর্তি হলাম ঢাকা ইউনির্ভাসিটিতে। আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হওয়ার পরই একেবারে পাল্টে গেলাম। পড়াশোনা বা ক্লাস তেমন একটা করতাম না। আসলে সিষ্টেমটাই এমন ছিলো যে, পড়াশোনার দরকার পড়তো না। যখন পরীক্ষা একেবারে সামনে চলে আসতো; অর্থাৎ পরীক্ষার এক দেড় মাস আগে রিয়াল পড়াশোনা শুরু করতাম। তারপরও রেজাল্ট ভালোই করেছি, তবে ক্ষতি যেটা হয়েছে তা হলো আমার বেইসটা তৈরী হয়নি। মানে, সত্যিকারার্থে টার্গেট অরিয়েন্টেড যে পড়াশোনা সেটা আমার হয়নি। আর সেটা আমি বুঝতে পারলাম ইউএসএ-তে এসে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করার পর। তখন বেশ বুঝতে পারলাম, অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের চাইতে আমার বেসিকটা খুব খারাপ। উদাহরণ স্বরূপ, ইন্ডিয়ার কথাই বলবো, ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টদের লেবেলটা অনেকটা ভালো ছিলো, অন্তত আমার তুলনায়। আর ওদের সাথে আমার সে গ্যাপটা কাভার করতে প্রায় এক বছর লেগেছে। এ জন্য প্রচুর পড়াশোনাও করতে হয়েছে। যা হওয়া উচিত ছিলো না। ঢাকা ইউনির্ভাসিটিতে ঢোকার পরই আমাদের জানা উচিত, আসলে আমরা কি করতে যাচ্ছি; আর কি করা উচিত। যেহেতু আমাদের সে গোলটা থাকে না, কিংবা দেখতে পারি না আমাদের ফিউচার সেহেতু আমাদের অনেকটা পিছিয়ে থাকতে হয়। আমার চার বছরের কোর্স ছিলো, কিন্তু তা শেষ করতে সময় লেগেছে সাত বছর। আমি বলছি না, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা খুব খারাপ; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশের শিক্ষার সিস্টেমটাই কেমন যেনো ওলোটপালট।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

কেনো সিস্টেমের এই ওলোটপালট? স্পেসিফিক কোন্ ব্যাপারটিকে আপনি এর জন্য দায়ি করে থাকেন?

ড. আমিন কবীর

এর সঠিক উত্তর আমার জানা নেই, তবে এ প্রসঙ্গে আমার সামনে যে প্রশ্নটি প্রথমেই এসে দাঁড়ায় তা হচ্ছে, কেনো স্টুডেন্ট পলিটিক্স? এ সংক্রান্ত অনেক আলোচনা আমরা শুনেছি। অনেক তর্ক-বিতর্ক করে সারা জীবন পার করে দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে স্টেট এ্যাওয়ে, কাট দা পলেটিক্স, ওইটুকুই। আমার মতে, শিক্ষাঙ্গন থেকে যতোদিন না পলিটিক্স বের হবে ততোদিন এ থেকে মুক্তি মিলবে না। আমাদের দেশের মতো শিক্ষাঙ্গনে পলিটিক্স আমি কোথাও দেখিনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে স্টুডেন্ট-টিচার রিলেসনশিপটাও তেমন একটা জোরালো নয়। ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে দূরত্বটা অনেক বেশী।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

আপনি শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্র রাজনীতি নির্মূলের কথা বলেছেন, কিন্তু অতীতে আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ জাতীয় ক্রান্তিকালে ছাত্র-রাজনীতির ভূমিকাকে অস্বীকার করবেন কিভাবে?

ড. আমিন কবির

আমি মনে করি সেটা ছিলো সময়ের দাবি, আজ তার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর তাছাড়া যখন জাতীয় কোনো ব্যাপার বা ইমার্জেন্সি আসবে তখন হৃদয়ের তাগিদ থেকে ছাত্ররা তাদের ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসবে। আমি মনে করি, এটা ছাত্র রাজনীতির জন্য নয়, ছাত্রদের উপলব্ধির কারণেই। সেটা জাস্ট কাম অটোমেটিক্যালি। এ জন্য ছাত্র রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই।

শামস রুস্তম (টগর)

আমি ড. আমিন কবিরের সাথে পুরোপুরি নই, আংশিকভাবে একমত। স্টুডেন্ট পলিটিক্স ইজ আ নট এ ব্যাড থিঙ্ক ফর মি। আমার জীবনে স্টুডেন্ট পলিটিক্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমি মনে করি, স্টুডেন্ট পলিটিক্স একটি ছাত্রকে তার কর্মজীবনের জন্য পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখে। এটা আমার নিজস্ব অনুভূতি। পলিটিক্স আমার ছাত্র জীবন এবং পেশাগত জীবনে অনেক কাজে লেগেছে। যেমন, আমার দূরদর্শিতা বেড়েছে, পাবলিক রিলেশন বেড়েছে, কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে, লোকজনকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হবে, কিভাবে টিমওয়ার্ক করতে হবে; যেটা এখানে এসে আমি দেখছি; তা আমি দেশে সরাসরি করে এসেছি এবং শিখে এসেছি। আমি ঔ সময়টাতে বুঝতে পারিনি যে, আমি কি করছি বা কি শিখছি কিন্তু আজ এদেশে এসে উপলব্দি করছি, টিমওয়ার্ক বা লিডারশিপ যে কথাই বলুন না কেনো, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারেই হোক আমার ভেতর সে জিনিসগুলো গড়ে উঠেছে। যে বিষয়গুলোকে আজ আমি এপ্রিসিয়েট করি। আসলে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করছেন জাতীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাদের অশুভ প্রভাবের কারণেই ছাত্ররাজনীতি বিপথে যাচ্ছে। যা কখনোই কাম্য নয়। আমি মনে করি, স্টুডেন্ট পলিটিক্স অবশ্যই থাকা উচিত তবে তাতে জাতীয় রাজনীতির সাথে কোনো লিঙ্ক থাকা উচিত নয়। যেমন আমরা এখানে কিছুদিন আগে দেখেছি ছাত্ররা মুভমেন্ট করেছে, সেটার সাথে কিন্তু জাতীয় রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ছিলো না, সেটা ছিলো একান্ত ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপার। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিজস্ব স্বার্থে ছাত্ররাজনীতিকে ব্যাবহার করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। যা দুঃখজনক। আমাদের সময়ও আমরা সে ব্যাপারটিই লক্ষ্য করেছি। পয়সা দিয়ে মিছিল করানো, হাঙ্গামা করানো, টিচারকে লাঞ্চিত করানো সবই দেখেছি। এটাই আসলে বড় সমস্যা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচার্স পলেটিক্স আরো ক্ষতিকর। লাল, নীল সাদা! আমার অনেক টিচার বন্ধু আছেন যাদের কথাবার্তা আমার ভীষণ খারাপ লাগে। এখনো টেলিফোনে কথা হলে তারা যে সব ভাষা ব্যাবহার করেন তা শুনলে দুঃখ লাগে। আর টিচাররাই যদি এমন ভাষায় কথা বলেন তবে স্টুডেন্টরা তাদের কাছে কি শিখতে পারে? আমি মনে করি, টিচারদের পলিটিক্সটাই বন্ধ করে দেয়া উচিত। আমি দেখেছি সুবিধাবাদী টিচারদের স্টুডেন্ট লিডারদের কাছে গিয়ে তদবির করতে।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

শামস রুস্তম, আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা বললেন, তার সাথে আমরা সকলেই কম-বেশী পরিচিত। আমরা চাচ্ছি কানাডার মতো একটি উন্নত দেশে বসবাস করে আপনারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বা করছেন তারই আলোকে সেইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আপনাদের পরামর্শ, বা কী হতে পারে আমাদের করণীয়? আমি এবার অনুরোধ করবো ড. মহিউদ্দিন তালুকদারকে আজকের বিষয়ের ওপর আলোচনা করার জন্য।

ড. মহিউদ্দিন তালুকদার

আমি মেডিক্যাল সায়েন্সের ছাত্র। আমরা মনে করি, আগে রোগ নির্ণয়, তারপর চিকিৎসা। আমরা যদি সমস্যা সম্পর্কে না জানি তবে সমাধান করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। আমার পূর্ববর্তী দু’জন আলোচক আসল সমস্যাগুলোর কথা যেমন বলেছেন তেমনি সেখানে সমাধানেরও একটা ইঙ্গিত আছে। যেমন ড. আমিন কবির বলেছেন স্টুডেন্ট পলিটিক্সের কথা, দ্বিতীয় বক্তা এর একটু ক্লারিফাই করেছেন আরো সুন্দর করে। আমিও মনে করি, স্টুডেন্ট পলিটিক্স থাকতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এর সাথে যেনো জাতীয় রাজনীতি কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট না থাকে। অবশ্যই স্টুডেন্ট পলিটিক্স থাকবে, এই কিছুদিন আগে মন্ট্রিয়লে যে ঘটনাটি ঘটে গেলো সেটা আমরা দেখেছি। ছাত্ররা অবশ্যই তাদের নিজস্ব সমস্যার কথা বলবে। আন্দোলন করার দরকার হলে করবে। সরকারের সাথে আলোচনা করবে। বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সাথে কথা বলবে। যেখানে তাদের সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু অন্য কোনো সমস্যা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া বা নিজেরা অন্যের সমস্যার সাথে জড়িত হয়ে, অর্থাৎ ছাত্র বা ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট স্বার্থ বহির্ভূত কোনো বিষয়ে ছাত্রদের জড়িয়ে ফেলা বা ছাত্রদের ব্যবহার করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। জাতীয় রাজনীতির কোনো কোনো কর্মসূচি এমনকি হরতালকে কার্যকর করার জন্য স্টুডেন্ট পলেটিক্সকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাকে আমি কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আমি মনে করি, স্টুডেন্ট পলেটিক্স থাকা উচিত, তবে সেটা তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য; জাতীয় বা দলীয় রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার হবার জন্য নয়। আমি নিজেও এক সময় হলে ছিলাম। হলগুলো সমস্যার অন্ত নেই। হলে সিট পাওয়া, খাবার-দাবার, পরীক্ষা নেয়া বা দেয়া নিয়ে নানা সমস্যা আছে। সেসব সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা আলাপ আলোচনা করবে, আন্দোলন করবে, এ জন্য তাদের একটা প্লাটফরমও থাকতে হবে। আমি আবারও বলবো, ছাত্র রাজনীতি থাকবে, তবে তাকে কোনো ভাবেই জাতীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বা জিম্মি করা যাবে না।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

আমরা মনে হয় মূল বিষয় থেকে আমরা একটু দূরে সরে যাচ্ছি। যদিও আজকের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে কোনো আলোচনায় অবধারিতভাবে ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারটি এসে যায়। ছাত্র রাজনীতি একটা অংশ, তবে মূখ্য নয়, অন্তত এ বৈঠকে।

ড. মহিউদ্দিন তালুকদার

ধন্যবাদ। আমি মনে করি, কারিগরি বা ব্যবহারিক শিক্ষার অভাবটা বাংলাদেশে একটু বেশী। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্ত বিদ্যাটাই বেশী প্রাধান্য পেয়ে থাকে এখন পর্যন্ত। একেবারে গ্রামের ছেলেটিও সারাদিন গরুর রচনা মুখস্ত করে চোখ বন্ধ করে, অথচ বাড়িতেই চোখের সামনে গরু। বলা যায় গরুর সাথেই তার বসবাস, তারপরও চক্ষু বন্ধ করে হরলালের রচনা চেঁচিয়ে মুখস্ত করে যাচ্ছে, গরুর দুইটা চোখ আছে, চাইরটা পা আছে, একটা লেজ আছে! এই যে শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতি এটা কিন্তু কোনো দিনও তাকে শিক্ষিত হতে সহায়তা করবে না। এর ফলে সে একটা সার্টিফিকেট পেতে পারে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে উঠবে না। আমার মতে, ব্যবহারিক শিক্ষাকে যতো বেশী প্রাধান্য দেয়া হবে শিক্ষা ব্যবস্থা ততো বেশী উপকৃত হবে। মুখস্ত বিদ্যা নয়। আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রদের ব্রেইনটাকে ব্যবহার করার ওপর জোর দেয়া অতীবও জরুরী। অবশ্য ইট ডাজ নট এক্সজিষ্ট। কেউ চাইলেও পারে না। এখন দেখেন লাইব্ররী ওয়ার্ক নেই, খেলাধুলা নেই, নেই এ জাতীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা। বরং আছে ক্ষতিকর দিক। আজ টিচাররা পর্যন্ত রাজনীতির সাথে জড়িত! সবাই আছে যেনো যে যার ‘ধান্ধা’ নিয়ে। যদিও ‘ধান্ধা’ কথাটা শুনতে খুব খারাপ শোনায়, তারপরও এটাই বাস্তবতা। দুঃখজনক। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীরাও জড়িয়ে যায় এর সাথে, না চাইলেও।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

ড. মহিউদ্দিন, এই যে আপনি ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরলেন, স্পেসিফিক বলবেন কি, এ থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে কি করে?

ড. মহিউদ্দিন

আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, জাতীয় রাজনীতি থেকে ছাত্র রাজনীতিকে আলাদা করতে হবে। দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে, এই নীল, সাদা, সবুজ কালার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি তো মনে করি, শিক্ষকদের রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই। আজ এই বৈঠকে যে শিক্ষকগণ উপস্থিত আছেন তারা তো এই কানাডায় দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতা করছেন, তারা কি কোনোভাবে এ দেশের জাতীয় রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন? দরকার নেই। এছাড়া আমি মনে করি শিক্ষাকে ঢাকাকেন্দ্রিক রূপ দেয়া ঠিক নয়, সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমপরিমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। সবশেষে আবারো বলবো মুখস্ত নয়, ব্যবহারিক শিক্ষাকেই প্রধান্য দিতে হবে।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

সেই পাকিস্তান আমল থেকেই আমরা একটি সুন্দর, সুস্থ শিক্ষানীতি দাবি করে আসছি। দেশ স্বাধীন হবার এতো বছর পরও সে দাবী অব্যাহত আছে। বরং দিন দিন জোরালো হচ্ছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে তারাই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সেই সুন্দর, সুস্থ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর একটি সুগঠিত পরিমার্জিত গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি আজও আমরা পাইনি। এবার আমি ড. ওয়াইজউদ্দিন আহমেদকে বলবো বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার জন্য।

ড. ওয়াইজউদ্দিন আহমেদ

শুরু করার আগে আমিও এড়িয়ে যেতে পারছি না ছাত্র রাজনীতি ইস্যুটিকে। বাংলাদেশে সেই পাকিস্তান আমল থেকে ছাত্র রাজনীতি চলে আসছে এবং আজও বিদ্যমান। আগে যে রাজনীতি ছিলো সেটা ছিলো সুষ্ঠ। ভাষা আন্দোলনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা ছিলো অপরিহার্য। দেশাত্মবোধ থেকে উদ্ভূত।

কানাডায় প্রতিটি স্কুল একটি ইউনিক। এখানেও পলিটিক্স আছে তবে সেটা সুষ্ঠ, সুন্দর। আমাদের দেশে পলিটিক্স লাইক ক্যান্সার। আগে লিডাররা শুধু পলেটিক্স করতো আর এখন সে পলিটিক্স ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। এখন গ্যাস বা মিটার রিডার বলেন, কে করে না পলেটিক্স? সরকার তো এই ক্ষতিকর রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্টাই করছে না, বরং তারা নিজেরাও এটা করছে। এটা এতো সহজ নয় যে, বললাম আর স্টুডেন্ট পলেটিক্স বন্ধ হয়ে গেলো। সেকেন্ড ইস্যু আমি মনে করি, সমস্যাটা আমাদের গোড়াতেই। আজ আপনি যদি কাউকে বলেন, তোমার জীবনের লক্ষ্য কি? উত্তরে কেউ কি বলে যে, আমি স্কুল টিচার হবো? আর আমি যদি এখানে কম্পেয়ার করি, কারা এখানকার স্কুল টিচার? এখানে স্কুল টিচার হতে হলে অবশ্যই তার সেই মানের ডিগ্রী এবং ব্রাইট এডুকেশন থাকতে হবে। তা না হলে এখানে স্কুল টিচার হওয়া সম্ভব নয়, এমনকি ইউনির্ভাসিটি লেবেলেও। স্পেশালি এলিমেন্টারি টিচার ইউ হ্যাভ টু বি রিয়েলি চাইল্ড এডুকেটর, তা না হলে ইউ ক্যান নট বি। আমাদের দেশে কি হচ্ছে? আগে এখানকার কথা একটু বলি, যদিও আমি এখানকার স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা নেইনি। ইন্টারমেডিয়েটের পরই চলে এসেছি। তবে দেখা এবং অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা কিভাবে পড়েছি, সিএটি-ক্যাট, সিএটি-ক্যাট বলতে বলতে আমরা শিখি আসলে সিএটি-ক্যাট। এখানকার পদ্ধতি ভীন্ন। একদিনের রিডিংয়ের পর তাকে আর সেটা পড়ানো হয় না। এখানে জানেন, গ্রেড সিক্স বা গ্রেড ফাইভ পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। দি টিচার ডিসাইড ওকে হি ইজ ম্যাচিউর এনাফ টু মুভ টু দ্য নেক্সট গ্রেড অর নট। আর আমাদের দেশে কি করা হয়, আই অ্যাম জাস্ট কম্পেয়ার, কিন্ডার গার্ডেনের কথাই যদি বলি, দে হ্যাভ নো লাইফ! বিরাট বইয়ের ব্যাগ কাঁধে দে আর গোয়িং টু স্কুল! শুধু স্কুল নয়, স্কুল থেকে ফিরে দেখবেন থ্রি টিউটোরিয়ালস! এটা কি জীবন! কী শেখাবেন আপনি ঐ শিশুটিকে? আর এখানে ঠিক তার উল্টোটি। শিশুটির স্বাধীনতা, তার স্বভাবজাত প্রবৃত্তির দিকে নজর রেখেই এথানে শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের দেশে সেই শিশু বয়স থেকেই ছাত্রদের অনেক চাপের মুখে ফেলে দেয়া হয়, যে চাপটা এখানে নেই। ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে শুরু হয় পরীক্ষা নেয়া। কাজেই আমাদের সমস্যাটা কিন্তু গোড়াতেই। সেখানে শিশুকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে মা-বাবাকেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। শিশুদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেনো বিসিএস কোয়েশ্চেন! এতো কঠিন কঠিন সব প্রশ্ন। আমার এক পরিচিত ফ্যামিলীর কথা জানি, একটা স্কুলে ক্লাস টু’র ভর্তি পরীক্ষার জন্য মা এবং মেয়ে দু’জনেই তিনমাস বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন মুখস্ত করেছে। মা বলছে, এখন আমি নিজেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবো। চিন্তা করে দেখুন ব্যাপারটা! এ দেশে থেকে যা অকল্পনীয়। প্রতি বছরই আমার বাংলাদেশে যাওয়া পড়ে শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে। সেখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি, শিক্ষা দানের পদ্ধতি দেখে আমি বিস্মিত হই। আসলে আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে রয়েছে অন্তহীন সমস্যা যা এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়, তবে আমি মনে করি একেবারে রুট লেবেল থেকেই যদি এর সংস্কার না করা হয় তবে কোনোভাবেই এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।

এবার পড়াশোনার সিষ্টেমের কথা বলছি, স্কুল বা ইউনির্ভাসিটি লেবেলে এই যে বছরের শেষে পরীক্ষা, ইটস রং। এখানে ঠিক তার উল্টো, একে তো সেমিষ্টার শর্ট, এখানে চার মাসে শেষ হয়ে যাবে কোর্স, চার মাসের মধ্যে দে উইল হ্যাভ টু কুইজেস, দুটো মিডটার্ম, হোমওয়ার্ক, ল্যাব, দে হ্যাভ নো টাইম। এসবের পর আর পলিটিক্সের সময় কোথায়? এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, ছাত্ররা তাদের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে অন্যসব ব্যাপারে তারা জড়াবে না। আর বাংলাদেশে টিচারদের রাজনীতি তো রয়েছেই। বুয়েট-এর কথাই ধরা যাক, আশিভাগ টিচারের ধান্ধাই হচ্ছে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। ওকে, বুয়েট ইজ গুড, এন্ড দে আর ডান ইন্টারন্যাশনালি নোন, বিকজ দ্য কোয়ালিটি অফ স্টুডেন্ট, উইথ নট বিকজ দ্য টিচিং।

ড. মাহতাব চৌধুরী

কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাব্যবস্থা। যে কারণে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পেশার মানুষগুলোকেও এদেশে এসে লেখাপড়া করে ডিগ্রীটা আপগ্রেড করতে হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার কথা যদি বলি, তবে প্রথমেই আমার চোখে ভাসে অন্য এক দৃশ্য। প্রথমত সেখানকার শিক্ষা পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কিলটা তৈরী করা হয় না। জোর করে বাধ্য করা হয় তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডাক্তারী পড়তে। এটা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এটা সত্যি কথা যে, স্কুল থেকে সব কিছু শেখানো সম্ভব না। তাই প্রয়োজন প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ইনডিভিজুয়াল স্কিল তৈরী করা। আর এটা থাকলে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই নিজেদের প্রস্তুত করে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। যেটা এদেশে করা হয়। বাংলাদেশে মুখস্ত বিদ্যাটার কারণে গাণিতিক বিষয়ে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই পিছিয়ে। অথচ আমরা দেখছি, ভারতের শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অনেক এগিয়ে। তবে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, এদেশে এলিমেন্টারি পর্যায় থেকেই শুধু পুঁথিগত বিষয় নয়; বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়ানো হয়। বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো। যে কারণে কথা বলা বা লেখায় সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এদেশের হাইস্কুলেরও সমপর্যায়ে পড়ে না। আমি মনে করি, শিক্ষার ক্যারিকুলাম পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সব সময় পিছিয়েই থাকবে।

রেবেকা সুলতানা

আমি পলিটিক্সের দিকে যাবো না। আজকের বিষয়বস্তুর ওপরই সরাসরি প্রবেশ করবো। আমি নিজে স্টুডেন্ট ছিলাম চিটাগাং ইউভার্সিটির, অধ্যাপনাও করেছি সেখানে। তিন বছর পর আমি যখন আমেরিকা গেলাম পড়াশোনা করতে, তো সেখানে গিয়ে আমাকে যে সমস্যায় পড়তে হলো তা হচ্ছে, আমি সেখানে গিয়ে একটা পেপার লিখতে হয় কিভাবে সেটা জানতাম না, কেননা ওসব আমাদের শেখানো হয়নি। যাহোক, সেখানে থাকলাম, পড়াশোনা শেষ করলাম। এরপর আমি কিন্তু দেশে ফিরে গিয়েছিলাম। দেশে ফিরে গিয়ে চিটাগাং ইউনির্ভাসিটিতে জয়েন করে প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটিতে পড়িয়েছি ছ’বছর। আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব একটা খারাপ ছিলো না। স্টুডেন্ট খারাপ ছিলো বিকজ ভালো ছাত্ররা সব সরকারী বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে চলে যায়। কিন্তু আমাকে সেই ফ্রিডমটা দেয়া হয়েছিলো ডিজাইন করার জন্য কোর্স, আমি নিজে যা করে এসেছি ওভাবেই করিয়েছি। আমি মনে করি, সরকারী বিশ্ববিদ্যায়গুলোতেও সেভাবেই করা উচিত। তবে আমার যেটা অসুবিধা হয়েছিলো সেটা হলো, আমাদের তিন বছরে অনার্স করে, মাস্টার্স করে, আবার ওখানে অর্থাৎ আমেরিকা  মাস্টার্স করতে হলো। এটা যেনো করতে না হয়। প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটিতে ওটা করতে হয় না কেননা ফোর ইয়ার সিষ্টেমটা থাকে। আমি দেশ ছেড়েছি ২০০৫ সালে। এখনকার কথা জানি না, তবে আমি যা মিস করেছি সেটাই বললাম। আমি মনে করি, যেহেতু ছাত্ররা বাইরে পড়তে আসবেই; সেহেতু ওদের ক্যারিকুলামটা সেইভাবেই পরিবর্তন করা উচিত, যাতে বাইরে এসে তাদের অসুবিধায় পড়তে না হয়।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

রেবেকা সুলতানা, আপনি ক্যারিকুলাম পরিবর্তনের কথা বললেন; বিষয়টাকে আরো পরিস্কার করে বলবেন কি?

রেবেকা সুলতানা

যেমন দেশে ফিরে গিয়ে আমার ফ্রিডমটা আমাকে দেয়া হয়েছিলো। আমি আমার নিজের সিলেবাস বানিয়েছি, আমার একজাম, এমএলএ সিষ্টেমে পেপার লিখতে দিয়েছি, আমি কুইজেস করেছি, সব কিছুই আমি করেছি। একজন ছাত্রের এটা যদি আগে থেকেই জানা থাকে তবে সে এসব দেশে এসে বুঝতে পারবে, কখন তাদের কি করতে হবে, কোন পেপার কিভাবে বানাতে হবে। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে, একটা ইউনির্ভাসিটির টিচার হওয়া সত্বেও আমি যা জানতাম না। যেহেতু আমাকে শেখানো হয়নি; আমাকে আগে করতে হয়নি। আমি মনে করি, এ বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে হ্যাঁ, যদ্দুর জানি প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটিতে এসব আপটুডেট করা হচ্ছে। তবে তারা ভালো করতে পারছে না এই কারণে যে, তারা ভালো স্টুডেন্ট পাচ্ছে না। ভালো স্টুডেন্টরা তো সব সরকারী ইউনির্ভাসিটিতে যাচ্ছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যলয়ে এসব আপটুডেট জরুরী বলে আমি মনে করি। তাদের ক্যারিকুলাম পরিবর্তন, সিলেবাস পরিবর্তন আই মিন আরো মর্ডানাইজ করা উচিত সিলেবাসটা। যতোটা জানি দেশে নর্থ-সাউথ, ইষ্ট-ওয়েষ্ট ইউনির্ভাসিটির সিলেবাসগুলো বেশ মর্ডার্ণ।

স্কুলের কথা কি বলবো। আমি ওখানে বা এখানে স্কুলে পড়াইনি। তবে আমার মেয়ে ওখানে স্কলাসটিকাতে পড়েছে। ও লেবেল, এ লেবেল-এ। ওখান থেকে ও লেবেল দিয়ে যখন সে এখানে এলো, স্কুলে ভর্তি করাবো টরেন্টোতে, এরা ও লেবেলস এর মানেই জানে না! এ লেবেলস কি? ইংলিশ মিডিয়াম ঠিক আছে, কিন্তু জাস্ট ও লেবেল নয়, আমেরিকান সিস্টেমটা যেমন আছে, আইবি সিস্টেমটা, একমাত্র স্কুল হচ্ছে আইএসডি এক্সেসিভলি এক্সপেনসিভ। আরো কিছু সিষ্টেম আনা দরকার যারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়বে, তাদের জন্য। বাংলা মিডিয়ামের কথা আমি এখানে বলবো না। আমি নিজেও বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি। তবে বাইরে আমাদের ছাত্রদের যেনো কোনো অসুবিধায় না পড়তে সেদিক বিবেচনা করে সিস্টেমের পরিবর্তনটাই মুখ্য বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে সরকারী ইউনির্ভাসিটিগুলোকেই গুরুত্ব বেশী দিতে হবে। কেননা, সরকারী ইউনির্ভাসিটিগুলোতে সেই গতবাঁধা সিস্টেমেই আজও পড়ানো হচ্ছে।

পরিশেষে বলবো, আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনের বৃহত্তর স্বার্থে টিচারদের এ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকা উচিত।

শাপলা বেগম

লোকাল স্টুডেন্ট হিসেবে আমি প্রথমেই বলবো, আমাদের এখানে যে পদ্ধতি বা ব্যবস্থায় শিক্ষা প্রদান করা হয় তা থেকে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। কেননা, আমি দেখছি, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যেসব ছাত্র এদেশে পড়াশোনা করতে আসে বাংলাদেশের দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা বা পদ্ধতির কারণেই এখানে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ইংরেজী উচ্চারণ থেকে শুরু করে পেপার তৈরী সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশ থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পড়তে আসা ছাত্রদেরও আমি বিপাকে পড়তে দেখেছি। এদেশের শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অনেককে হিমশিম খেতে হয়। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশী ছাত্রদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। কথা বলা ও লেখায় গোড়া তেকেই তাদের পারদর্শি করে তোলা উচিত।

 

ফারহানুল ইসলাম

আমি শাপলা বেগমের সাথে একমত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের আরো শক্ত অবস্থান তৈরীর জন্য আমাদের চিরাচরিত শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন অপরিহার্য। এদেশে এসে আমি অনেক কিছুই শিখছি। এদেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে আমি খুব সহজেই যেভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছি সেটা বাংলাদেশের চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্ভব না।

Leave a comment