• যতো লেখা

  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'সেরা দশ গল্প'। অসাধারণ দশটি গল্পের এক অনবদ্য উপস্থাপন। বইটি পড়তে ক্লিক করুনসেরা দশ গল্প
  • ছবি ফেলে আসা এবং চলমান সময়ের কথা বলে। ধরে রাখে সময়কে স্মৃদির ফ্রেমে। মাহাবুবুল হাসান নীরু অ্যালবামটি দেখতে ক্লিক করুনঅ্যালবাম
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ই-গ্রন্থ 'হৃদয়ছোঁয়া পঁয়ত্রিশ'। দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ আর মন-জমিনে দাগ কাটার মতো পঁয়ত্রিশটি ছড়া-কাব্য। বইটি পড়তে ক্লিক করুনকাছের মানুষ
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর খেলাধুলা বিষয়ক লেখা পড়ার জন্য ক্লিক করুনখেলা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর শিশুতোষ লেখাগুলো পড়তে ক্লিক করুনশিশুতোষ রচনা
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর গল্প পড়তে ক্লিক করুনগল্প
  • মাহাবুবুল হাসান নীরুর ছড়া পড়তে ক্লিক করুনE-BOOK
  • এক মাসের লেখা

পিতার জন্য প্রার্থণা

নিবন্ধ

২১ নভেম্বর। আমার জীবনের বেদনাময় একটি দিন। ২০০০ সালের এ দিনটিতে আমার পিতা এম এ মোমেন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন । চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। অকৃত্রিম আর সুন্দর মনের বিশাল হৃদয়ের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। অন্তর জুড়ে বিস্তৃত ছিলো সীমাহীন উদারতা। তাঁর মহত্ব আর আদর্শকে তারাই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন, যারা তাঁর সান্নিধ্যে গেছেন। নিরহঙ্কারী, বর্ণাঢ্য জীবনধারী এমন একজন বাবার সন্তান হিসেবে জন্মলাভ করে আমি গর্ববোধ করি। সুবিশাল হৃদয়ের এই অসাধারণ মানুষটির অপরিসীম স্নেহ-আদর আর ভালোবাসা ছিলো আমাদের জন্য। একটা সবল দেহের সুস্থ্য-সুন্দর মানুষ মাত্র পনরো-বিশ মিনিটের নোটিশে কী করে যে চলে গেলেন- সেটা আজও আমার কাছে একটা বিস্ময়। পঁয়ষট্টি বছরের দীর্ঘ জীবনে তাঁর একটিও শত্রু ছিলো না। সুদৃঢ় চরিত্রের অধিকারী একজন বাবার সন্তান হতে পারার অহঙ্কারটা যে কতো বড় সেটা আমরা তাঁর সন্তানরা সারা জীবন উপভোগ করেছি। আজও করি। আদমজী জুট মিলের প্রোডাকশন ম্যানেজার, পরে বাংলাদেশ ফেব্রিক কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার আব্বা যেখানেই গেছেন সেখানেই সকলের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মানুষে পরিণত হয়েছেন। স্বীয় স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে অপরের কল্যাণ সাধনে তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন। আব্বা ছিলেন আমার একজন বড় বন্ধু। পিতা আর সন্তানের মধ্যে তেমন কোনো দূরত্ব ছিলো না। তিনি ছিলেন আমার কর্ম জীবনের প্রধান উৎসাহদাতা। সরকারী চাকুরী জীবন শেষে মাত্র ক’টা দিন আফ্রিকার ইরিত্রিয়ার একটি জুট মিলে কাটানোর পর ফিরে এসে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেন এবং মৃত্যুর সময় পর্যন্ত আমরা তাঁর সাথেই ছিলাম। আমার সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিলেন তিনি। আমার বই-পুস্তক, প্রয়োজনীয় পত্র-পত্রিকা, রেফারেন্স বুক তাঁর কক্ষেই থাকতো। তিনি সব সময় এসবের দিকে বিশেষ নজর রাখতেন। আমার কোনো শুভ সংবাদ শুনে তিনি মাথায় হাত রেখে বলতেন, ‘তোমার জন্য আমি অনেক দোয়া করি বাবা’, আর কোনো সমস্যায় পড়লে দোয়া-কালাম পড়ে মাথায় ফু দিয়ে বলতেন, ‘চিন্তা কোরোনা চেংড়া, আল্লাহ আছেন।’ আমার সাথে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে তিনি ‘চেংড়া’ শব্দটা ব্যবহার করতেন। এখন আমি সমস্যাগ্রস্ত হলে কেউ আমার মাথায় হাত রেখে বলেন না, ‘চিন্তা কোরোনা চেংড়া, আল্লাহ আছেন।’ এই পৃথিবীতে আজ সেই স্নেহময় হাতটার বড়ই অভাব বোধ করি। পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে, কিংবা বইমেলায় বই, তা নিয়ে ছুটে যেতাম তাঁর কাছে, তিনি দেখে খুশী হতেন। মনোযোগ সহকারে পড়তেন। আমাকে আশির্বাদ করতেন। পিতার উদার চিত্তের সেই আশির্বাদ বাণী আজ আর আমার পৃথিবীতে উচ্চারিত হয় না। আমাকে কেউ বলেন না, ‘চেষ্টা করো বাবা, আরো অনেক বড় হবে।’ এটা যে কতোটা কষ্টের সেটা বলে-কয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। সত্যি বলতে কি, তাঁর চলে যাবার সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়েছে আমার মাথার ওপরের ছায়া। মায়াভরা একটা ছায়া যে জীবনের জন্য কতোটা দরকার, কতোটা শক্তিবর্ধক সেটা তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই মর্মে মর্মে অনুভব করছি। গুণীজনরা বলেন, সন্তানের যা দোষ-গুণ সেটা অর্জিত হয় বাবা-মা’র কাছে থেকে, তাদের চরিত্র থেকে, তাদের সংসার থেকে। আব্বার কাছ থেকে আমি শিখেছি, কি করে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, কি করে মানুষকে কাছে টানতে হয়, দূরের মানুষকে কি করে বুকে টেনে আনতে হয়। আব্বা বলতেন, ‘পরের জন্য তুমি থাকলে, তোমার জন্য আল্লাহ থাকবেন।’ আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা আমাদের বাসায় এসে থাকেননি কিংবা খাননি। গরীব আত্মীয়-স্বজনদের যে তিনি কতোভাবে উপকার করেছেন সেটা হিসেব করে বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় তিনি অন্যের জন্য করণীয় বিভিন্ন উপদেশ দিতেন। নানা কারণে হয়তো সব সময় পারি না; তবে আজও চেষ্টা করি আব্বার সে উপদেশ মেনে চলতে।

আমি আমার পিতার মতোই একজন ভা‌লো মানুষ হিসেবে, মানুষের ভালোবাসা নিয়েই যেনো এ পৃথিবী ছাড়তে পারি, আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে পরম করুণাময়ের কাছে সে প্রার্থণাসহ তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
২১ নভেম্বর, ২০১২
মন্ট্রিয়ল, কানাডা।

Leave a comment